‘পানির ভেতর থেকে ভাইকে বাড়িয়ে দিয়ে আম্মু তলিয়ে যায়’

মায়ের সঙ্গে নদের পানিতে পড়ে গিয়েছিল শিশু আরাফাত আল সাদ। মা তাঁকে বাঁচিয়ে দিলেও নিজে তলিয়ে যান। ফুফুর কোলে বসে বারবার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করছে সাদ। শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দুই সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে কাশবন দেখতে গিয়েছিলেন গাজীপুরের গৃহবধূ রিনি আক্তার (৩৮)। ছোট্ট একটি নৌকা ভাড়া করে নদ পাড়ি দিয়ে কাশবনে যাচ্ছিলেন তাঁরা। নৌকায় একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে শিশুসন্তান সাদকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন তিনি। কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকার দোলে সাদকে নিয়ে পানিতে পড়ে যান রিনি। কিছুক্ষণ পর দুই হাত দিয়ে সাদকে ধরে পানির ওপর ভেসে ওঠেন তিনি। তখন নৌকা থেকে একজন নেমে সাদকে নৌকায় তুলে নেন। এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে যান ওই গৃহবধূ।

আজ শনিবার দুপুরে ডুবুরিরা নদ থেকে গৃহবধূ রিনি আক্তারের লাশ উদ্ধার করেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামের নাজমুল ইসলামের স্ত্রী। গতকাল শুক্রবার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে নৌকায় ছিলেন শাশুড়ি মজিদা বেগম (১৫), মেয়ে তাসমিয়া তাসনিম, ভাই আল-আমিন (২৫), ননদ তিথি আক্তার (১৫) ও শিশু আরাফাত আল সাদ।

আরও পড়ুন

কাঁদতে কাঁদতে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রিনির চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া মেয়ে তাসমিয়া তাসনিম বলে, ‘নৌকা দোল খাওয়ায় মা সাদকে নিয়ে পানিতে পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পানির ভেতর থেকে সাদকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আম্মু তলিয়ে যায়।’

আজ বিকেলে রিনি আক্তারের লাশ বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। বাড়িজুড়ে মাতম চলছে। মায়ের সঙ্গে পানিতে পড়ে যাওয়া সাদ ফুফুর কোলে বসে স্বজনদের মাতম দেখছে। বারবার ফুফুর কাছে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করছে। মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি তখনো উপলব্ধি করতে পারেনি সে।

নৌকায় থাকা স্বজনদের বরাত দিয়ে রিনির ননদ মোসা. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুই সন্তান ও অন্যদের নিয়ে ভাবি ব্রহ্মপুত্রপাড়ে কাশবন দেখতে বের হয়েছিলেন। শিশু সাদকে কোলে নিয়ে নৌকায় একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেছিলেন ভাবি। কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকা দোল খায়। তখন সাদকে নিয়ে পানিতে পড়ে যান তিনি। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে তিনি সাদকে নিয়ে পানির ওপর ভেসে ওঠেন। ততক্ষণে নৌকা ভাসতে ভাসতে কিছুটা দূরে চলে যায়। নৌকা থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়ে ভাবির ভাই সাদকে নিজের হাতে নিয়ে নৌকায় রাখেন। এর মধ্যে পানিতে তলিয়ে ভাবি নিখোঁজ হন।

শিরিন আরও বলেন, নৌকায় থাকা লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন নৌকা নিয়ে এসে ঘটনাস্থলে খোঁজাখুঁজি করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে অনুসন্ধান চালান ডুবুরিরা। আজ আবার অনুসন্ধান চালানো হয়। দুপুরের দিকে লাশ উদ্ধার করেন ডুবুরিরা।

নগরহাওলা গ্রামের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় আনন্দ পরিণত হয়েছে বিষাদে। মাকে হারিয়ে সন্তানদের কান্না থামছে না।