দুই বছরে একজন আসামিও শনাক্ত হলো না কেন, প্রশ্ন নিহত দিলীপ দাসের স্ত্রীর

দিলীপ দাসের ছবি নিয়ে এখনো কাঁদেন তাঁর স্ত্রী রূপা দাস। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরের মোগলটুলি এলাকায় রূপা দাসের বাড়িতে
ছবি: এম সাদেক

মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তের ঢল। এবাড়ি–ওবাড়িতে প্রতিমা দেখতে রংবেরঙের শাড়ি পড়ে নানা বয়সী নারীরা যাচ্ছেন। দেবীকে প্রণাম করছেন। কিন্তু রূপা দাসের মনে শান্তি নেই, আনন্দ নেই। দুই বছর আগে এমন এক মহাঅষ্টমীতে কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর এলাকার রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দিরে রূপার স্বামী দিলীপ দাসের মাথায় একটি ইটের টুকরা এসে পড়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

রূপা দাসের প্রশ্ন, ‘এই ঘটনায় একজন আসামিও শনাক্ত হলো না? গ্রেপ্তার হলো না? মামলার চার্জশিট দাখিল হলো না? এ কেমন বিচার?’ গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নগরের রাজগঞ্জ বাসায় এভাবেই নিজের দুঃখ, ক্ষোভ, হতাশার কথা বলেন রূপা দাস।

আরও পড়ুন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীতে কুমিল্লা নগরের নানুয়ারদিঘির উত্তরপাড়ে দর্পণ সংঘের পূজামণ্ডপে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে পুরো নগরী উত্তাল হয়ে ওঠে। সেদিন বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দিরে ছিলেন রাজগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দিলীপ দাস (৬১)। তখন মন্দিরের পাশের সড়ক দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন একদল লোক। মিছিল থেকে মন্দিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ইট মাথায় লেগে গুরুতর জখম হন তিনি। এরপর তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২১ অক্টোবর রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় দিলীপের স্ত্রী ২৪ অক্টোবর বাদী হয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুই বছরেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। কোনো আসামিও শনাক্ত হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবারটি। রূপা দাসের একমাত্র ছেলে রাহুল দাস দেশের বাইরে। মেয়ে প্রিয়া রানী দাস থাকেন ঢাকায়।

রূপা দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে কষ্টের জীবন। এখন পর্যন্ত স্বামী হত্যা মামলার আসামি শনাক্ত হয়নি। মামলার চার্জশিটও হয়নি। এটা দুঃখজনক। পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে সর্বস্বান্ত আমরা। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা করেনি। মানুষটা নেই—এ দুঃখ মনে বয়ে বেড়াচ্ছি।’

রূপা দাসের মেয়ে প্রিয়া রানী দাস বলেন, ‘ওই সময়ে (২০২১ সালে) বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, জখম ও হত্যার ঘটনায় কুমিল্লায় ১২টি মামলা হয়। ১১টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আমার মায়ের দায়ের করা মামলার কোনো হদিস নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া দরকার। দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

জানতে চাইলে পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দিলীপ দাস হত্যা মামলার অভিযোগপত্র এখন পর্যন্ত দিতে পারিনি। এটির তদন্ত চলছে।’