কমিটিতে নেই আমানুরের অনুসারীরা, উত্তপ্ত ঘাটাইলের রাজনীতি

আমানুর রহমান খান

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার অনুসারীরা পদ পাননি। তাই তো ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে তাঁর পক্ষের অনুসারীরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এ নিয়ে সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটেছে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঘাটাইলের রাজনীতি।

আমানুরের অনুসারীদের অভিযোগ, দলের ত্যাগী অনেক নেতা-কর্মীকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। বিএনপি–জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পদ পেয়েছেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, আমানুরের সঙ্গে এখন দলের কেউ নেই। টাঙ্গাইল থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এনে তিনি ঘাটাইলে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছেন।
আমানুর রহমান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় ২০১৪ সালে তিনি অভিযুক্ত হন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় তাঁর বাবা আতাউর রহমান খানকে। আতাউর রহমান এখন এ আসনের সংসদ সদস্য।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৬ জুন ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফে লেবু সভাপতি ও আবদুর রহিম সাধারণ সম্পাদক হন। তাঁরা দুজনই আমানুরবিরোধী অংশের নেতা। পরে গত ২৮ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এতে আমানুরের অনুসারীদের বেশির ভাগ বাদ পড়েন।

আমানুরের অনুসারীরা গত রোববার ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে তাঁরা টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরদিন উপজেলা আওয়ামী লীগ এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। আমানুরের অনুসারীরাও সমাবেশ করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা–কর্মী আহত হন।

আরও পড়ুন

উপজেলা আওয়ামী লীগ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ইউপি নির্বাচনে আমানুর দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি ভোট চেয়েছেন। তাঁর লালিত সন্ত্রাসীদের হাতে বিভিন্ন সময় দলীয় নেতা–কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর নির্দেশে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলার ঘটনাও ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, সহসভাপতি লোকমান হোসেন, শহিদুল ইসলাম হেস্টিং, শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল বলেন, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় কোথাও এখন দলীয় নেতা-কর্মীরা আমানুরের সঙ্গে নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমানুর তাঁর লালিত কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে চলাফেরা করেন। কমিটি ঘোষণার পর টাঙ্গাইল থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ঘাটাইলে এনে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

আমানুর অংশের নেতা ও আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তালুকদার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখনো আমানুর রহমান খানের সঙ্গেই আছেন। শহিদুল টাকার বিনিময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ বিক্রি করেছেন। এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি না হওয়ায় পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চিকিৎসক মতিউর রহমান। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সে বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শহিদুল। আমানুর রহমান খান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় টাঙ্গাইল ও ঘাটাইলে তাঁদের পরিবারের একছত্র আধিপত্য তৈরি হয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশি তদন্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আমানুর ও তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পরে তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান। এ সময় ঘাটাইল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আমানুর বিরোধীদের হাতে চলে যায়। পরে আমানুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছরের অধিক সময় হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি ঘাটাইলেই বেশি অবস্থান করেন। তাঁর বাবা সংসদ সদস্য হলেও তিনি (আমানুর) ছায়া সংসদ সদস্যের ভূমিকায় আছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটাইলে আওয়ামী লীগ তার নিজ গতিত চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা সঠিকভাবেই করা হয়েছে। কমিটির বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের বর্তমানে কোনো পদ–পদবি নেই।