যশোরে বিক্রি হয়নি ‘গডফাদার’ ও ‘ভাইজান’, অর্ধেক দামে বিক্রি ‘রাজাবাবু’

যশোর সদর উপজেলার ‘ভাইজান’ নামের গরুটি কোরবানির হাটে ১৮ লাখ টাকা দাম হাঁকা হয়েছিল। সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন ক্রেতারা। গরুটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়নি
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র কোরবানির ঈদে আলোচনায় থাকা যশোরের বিশাল আকারের ‘গডফাদার’ ও ‘ভাইজান’ নামের গরু দুটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। আর হাঁকানো দামের অর্ধেকে বিক্রি হয়েছে ‘রাজাবাবু’ নামের ৩০ মণ ওজনের গরুটি।

‘রাজাবাবু’ নামের গরুটি ছিল যশোরের কেশবপুর উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, গরুটি বিক্রির জন্য তিনি দাম হেঁকেছিলেন ১৫ লাখ টাকা, কিন্তু বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ লাখে, এতে তিনি হতাশ। দুই বছর গরুটি লালনপালন করতে তাঁর অনেক টাকা গেছে। আশা ছিল, ভালো দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

রফিকুল ইসলামের ছেলে মাহাবুর রহমান বলেন, ‘৩০ মণের রাজাবাবুর দাম চাওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। পরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রির আশা করেছিলাম। গাজীপুর থেকে আসা এক ক্রেতা সাড়ে ছয় লাখ টাকায় গরুটি নিয়ে গেছেন। রাজাবাবুকে লালনপালন করতে যে খরচ হয়েছে, আর যে দামে বিক্রি করতে হলো, তাতে লোকসান হয়েছে।’ তাঁরা আর কখনো বড় গরু লালনপালন করবেন না বলে জানান।

আরও পড়ুন

যশোর সদর উপজেলার রহমতপুর গ্রামের প্রান্ত বিশ্বাস শখের বশে তিন বছর ধরে একটি গরু লালনপালন করছেন। গরুটির তেজি ভাবের কারণে আদর করে নাম রাখেন ‘গডফাদার’। ২০ মণ ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হয় ১৩ লাখ টাকা। গরুটি কোরবানির হাটে তোলা না হলেও অনলাইনে বিক্রির জন্য প্রচারণা চালানো হয়। এতে দুজন ক্রেতা তাঁর বাড়িতে গিয়ে ৫ লাখ ৮০ হাজার এবং সাড়ে ৬ লাখ টাকা দাম বলে আসেন। কিন্তু প্রান্ত বিশ্বাস কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় গরুটি বিক্রি করেননি। গরুটির পেছনে প্রতিদিন ৮০০ টাকার খাবার লাগে বলে তিনি জানান।

গরুটির যে ওজন, তাতে ১৩ লাখ টাকা দাম হাঁকা ঠিক ছিল কি না, জানতে চাইলে প্রান্ত বিশ্বাস বলেন, ১৩ লাখ টাকা দাম চাইলেও দর–কষাকষির সুযোগ ছিল। কিন্তু বড় গরু কেনার মতো ক্রেতার এবার অভাব ছিল।

‘ভাইজান’ নামের গরুটির মালিক যশোর সদর উপজেলার সীতারামপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মহিদুল জামান। তিনি জানান, ৩৫ মণ ওজনের ভাইজানকে প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি, গমের আটা, খইল, ভুট্টাভাঙা, রাইস পলিশ আর অল্প পরিমাণ ধানের কুঁড়া খেতে দেওয়া হয়। এই গরুর পেছনে দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা খরচ হয়।

আরও পড়ুন

মহিদুল কোরবানির হাটে ‘ভাইজান’ গরুটির দাম হেঁকেছিলেন ১৮ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ক্রেতারা সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা বললেও তিনি গরুটি বিক্রি করে দিতেন। কষ্ট করে গরুটা বড় করলেও যশোরের বাইরে থেকে তেমন কোনো ক্রেতা আসেননি। আগামী কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রির আশা তাঁর।

এবার কোরবানির ঈদে যশোরে কী পরিমাণ অবিক্রিত গরু রয়েছে, সে পরিসংখ্যান জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দিতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, বড় গরুর চাহিদা সাধারণত ঢাকা ও চট্টগ্রামের দিকে একটু বেশি থাকে। জেলা শহরে এবার মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা ছিল। জেলায় কী পরিমাণ গরু অবিক্রিত রয়েছে, তার হিসাব নেই।

আরও পড়ুন

রাশেদুল হক বলেন, ‘ঈদের আগে আমি সীতারামপুরে ভাইজান নামের গরুটি দেখতে গিয়ে উদ্যোক্তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম মোটামুটি দাম পেলে বিক্রি করে দিতে। কারণ, আরও এক বছর বড় গরু লালনপালন করা বেশ কঠিন ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু গরুটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়নি শুনেছি, দুঃখজনক।’