কাশিমপুর কারাগারে ৬ দিনের ব্যবধানে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যু
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ছয় দিনের ব্যবধানে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দুজনই গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন আজ শুক্রবার দুপুরে মারা যান। আসাদুজ্জামান হিরা খান (৪৫) নামের ওই ব্যক্তি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ বন্দী ছিলেন। আজ সকালে বুকে ব্যথা শুরু হলে তাঁকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার আমিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসাদুজ্জামান হিরা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের গিয়াস উদ্দিন খানের ছেলে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আসাদুজ্জামানকে বিস্ফোরক মামলায় ২৯ অক্টোবর গাজীপুর জেলা কারাগারে নেওয়া হয়। পরে ১০ নভেম্বর কাশিমপুর কারাগারে আনা হয়।
জ্যেষ্ঠ জেল সুপার আমিরুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে আসাদুজ্জামানের লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম বলেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে বিকেলে ট্রেনযোগে শ্রীপুর রেলস্টেশনে এসে নামেন আসাদুজ্জামান। এ সময় শ্রীপুর থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আক্তারুল আলম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, কেবল রাজনৈতিক কারণে সুস্থ একজন মানুষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল। এরপর তাঁর এমন মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।
এর আগে গত শনিবার কাশিমপুর কারাগারে বন্দী চট্টগ্রামের বিএনপির এক নেতা মারা যান। ওই ব্যক্তির নাম গোলাপুর রহমান (৬৩)। তিনি চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও থানাধীন চর রাঙ্গামাটিয়া এলাকার মৃত আবদুল মিয়ার ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম মহানগরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ও মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম, গোলাপুর রহমানসহ সাতজনকে ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের আগের দিন সন্ধ্যায় পল্টনের বিএনপি অফিসের সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এর পর থেকে তাঁরা কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দুপুরে কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়েন গোলাপুর রহমান। তাঁকে উদ্ধার করে কারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাঁকে কারা অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা ছিল।
শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে এক কর্মকর্তা গোলাপুর রহমানের ছেলেকে টেলিফোনে তাঁর মৃত্যুর খবর দেন। লাশ আনার জন্য ঢাকায় যেতে বলেন। ওই কর্মকর্তা জানান, বেলা দুইটার দিকে তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান আইনি প্রক্রিয়া শেষে গোলাপুরের লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা জানান।
এদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ সকালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম জহিরুল হক ভূঁইয়া (৭০)। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার লক্ষ্মীবরদী গ্রামের মৃত ফাজিল উদ্দিনের ছেলে।
কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, জহিরুল হক ভূঁইয়া গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সোয়া ছয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় করা একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগারের সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির লাশ একই হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।