শিবপুরে কিশোরীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে শিক্ষকের বিচার দাবি মায়ের

নরসিংদীর শিবপুরে কিশোরী মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মা
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে থানায় যাওয়া কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ওরফে কণিকার গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেছেন কিশোরীর মা নিলুফা ইয়াসমিন।

আজ সোমবার দুপুরে নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড়ের একটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেন তিনি।

মারা যাওয়া কিশোরীর নাম আইনুন তাজরি ওরফে প্রভা আক্তার (১৩)। সে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী লুৎফর রহমান ওরফে ভুট্টো মিয়ার মেয়ে এবং শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পুলিশ ও সহপাঠীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক নার্গিস সুলতানার বেত্রাঘাত ও অপমান সইতে না পেরে বিষ খেয়ে নিজেই শিবপুর থানায় চলে যায় ওই কিশোরী। পরে সেখানেই ঢলে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। থানায় কিশোরীর দেওয়া বক্তব্য এজাহারে উল্লেখ করে পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষককে আসামি করে উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘নার্গিস সুলতানা বিদ্যালয়টির সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য কৌশলে চাপ দিতেন তিনি। প্রাইভেট পড়ানোর জন্য নানা অজুহাতে অপমান-অপদস্থ করার কথা আমার মেয়ে একাধিকবার জানিয়েছিল। বৃহস্পতিবার স্কুলে যাওয়ার সময় প্রভা দেখতে পায়, তার স্কুলের নির্ধারিত সালোয়ার ছিঁড়ে গেছে। বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর সময় হয়ে যাওয়ায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে ওই সালোয়ার সেলাই করে দিতে পারিনি। তাই সে ট্রাইজার পরে বিদ্যালয়ে যায়। ওই দিন শিক্ষক নার্গিস সুলতানা প্রথমে অ্যাসেম্বলি ও পরে শ্রেণিকক্ষে দুই দফা তাকে অপমান ও মারধর করেন।’

আরও পড়ুন

নিলুফা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘সরকারি আইন অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের অপমান বা মারধর করার সুযোগ নেই। অথচ নার্গিস সুলতানা এক দিনে দুইবার সহপাঠীদের সামনে আমার মেয়েকে অপমান ও মারধর করেছেন। বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমি ওই শিক্ষককে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

এর আগে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন নিলুফা ইয়াসমিন। এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ গণ্যমান্য কয়েকজন আমাকে নানাভাবে চাপ দিয়েছেন বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার জন্য। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার ওই সময়ে আমাকে বলা হয়েছিল, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করাটাই আমার জন্য ভালো হবে। মেয়ে থানায় গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে এসেছে, তা–ও আমি জানতাম না। এখন যেহেতু সব জেনেছি, তাই ওই শিক্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই আমি।’

আরও পড়ুন

সহপাঠীরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রভা আক্তার বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাকের সঙ্গে ট্রাউজার পরে শ্রেণিকক্ষে আসায় শিক্ষক নার্গিস সুলতানা তাকে শ্রেণিকক্ষে দাঁড় করিয়ে অপমান করেন। একপর্যায়ে তাকে বেত্রাঘাত করেন ও থাপ্পড় দেন। শ্রেণিকক্ষের মধ্যে শিক্ষকের এমন আচরণ মানতে না পেরে ওই সময়ই শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে চলে যায় সে। পরে বাজারের একটি দোকান থেকে ইঁদুর মারার বিষ কিনে তা খেয়ে শিবপুর থানার ডিউটি অফিসারের কাছে চলে যায় প্রভা। এ সময় সে জানায়, ‘ক্লাসে কণিকা ম্যাডাম মেরেছে, তাই ইঁদুর মারার ওষুধ কিনে খেয়েছি।’ এরপরই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। আশা করছি দ্রুতই তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে।’