বিভিন্ন এলাকায় আ.লীগের অবস্থান, রেলস্টেশনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। শনিবার দুপুরেছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশ হচ্ছে নগরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে। সকাল থেকে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে। নগরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। কোনো কোনো এলাকায় মহড়া দিতে দেখা গেছে তাঁদের। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে বেলা ১২টার দিকে খুলনা রেলস্টেশন এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সংঘর্ষের সময় রেলস্টেশনে ভাঙচুর করা হয়েছে। বিএনপির সমাবেশে আগত ব্যক্তিদের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন
খুলনা নগরের খালিশপুরের বৈকালী বাজার এলাকা থেকে দৌলতপুরের নতুন রাস্তা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নিজেদের দখলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে ওই সড়কে সশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে রেলস্টেশন চত্বরে ভিড় করেছিলেন বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এটা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং স্টেশনের বিভিন্ন জানালা-দরজার কাঁচ ভেঙে ফেলেন। প্রায় আধঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার দাবি করেন, নিজেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষে জড়ান আগত ব্যক্তিরা। একপর্যায়ে তাঁরা স্টেশনের গ্লাস ভাঙচুর করেন। পুলিশকে খবর দিলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আরও পড়ুন

বেলা দেড়টার দিকে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পুলিশ স্টেশনে অবস্থান নিয়েছে। রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অনেক মানুষ অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত। রেল কর্মচারীরা ভেঙে যাওয়া কাচ পরিষ্কার করছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মহড়ার সময় একজনের হাতে চাপাতি দেখা যায়। শনিবার দুপুরে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন।

কেএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনালী সেন বলেন, সমাবেশে আসতে কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

খুলনা নগরের খালিশপুরের বৈকালী বাজার এলাকা থেকে দৌলতপুরের নতুন রাস্তা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নিজেদের দখলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে ওই সড়কে সশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের। তাঁদের হাতে ছিল রামদা, চাপাতি ও লাঠিসোঁটা।

আরও পড়ুন

বেলা একটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বৈকালী বাজারে থাকা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বসে আছেন নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে কোনো যানবাহন ঢুকতে ও বের হতে পারছে না। সেখানে গেলেই মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

বিএনপির কার্যালয়ে আগুন

শহরের বৈকালী মোড়ে আদ-দ্বীন হাসপাতালের সামনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী এনায়েত আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। বেলা দুইটার দিকে ওই কার্যালয়ের পাশে বিএনপির কার্যালয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে সেটা জানা যায়নি।

এনায়েত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে আছি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। বিএনপির কার্যালয় কারা পুড়িয়েছে, তা আমরা জানি না।’

দৌলতপুর থেকে সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসার পথে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। আহত এক কর্মীকে সমাবেশস্থলে নিয়ে আসেন বিএনপির কর্মী–সমর্থকেরা। সোনালী ব্যাংক চত্বর, খুলনা, ২২ অক্টোবর
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

নিউমার্কেট এলাকায় যুবলীগের একদল কর্মীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাঁরা মাঝেমধ্যে যশোর রোডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দেখলে ধাওয়া দিচ্ছেন। এ ছাড়া ২৫ নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল দেখা গেছে।

নিউমার্কেট এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, ‘ওই সময় আমি নিউমার্কেটের ভেতরে ছিলাম। হামলার ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে পরবর্তী সময়ে শুনেছি, বিএনপির মিছিল থেকে নিউমার্কেটের সামনে থাকা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছিল। সংঘবদ্ধভাবে ওই হামলা প্রতিহত করা হয়। এর বাইরে কোনো কিছু ঘটেনি।’