আবাসিক ছাত্রকে হল ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়ে অনাবাসিক ছাত্রকে তুলল ছাত্রলীগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা জয়ন্ত রায় (বায়ে) ও ছাত্রলীগকর্মী আরিফ
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের এক আবাসিক ছাত্রকে কক্ষ ছাড়তে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ওই কক্ষে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক তুলে দিয়েছেন তাঁরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের ৪৩১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় ও হল ছাত্রলীগের কর্মী আরিফ।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায়ের অনুসারী আরিফের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন ছাত্রলীগ কর্মী ৪৩১ নম্বর কক্ষে আসেন। মেহেদী হাসান কবে হল ছাড়বেন, তা জানতে চান। এ সময় তাঁরা নাজমুল নামের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র ওই কক্ষে রাখেন। নাজমুল ওই কক্ষে থাকবেন বলে জানান। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে হল ছাড়তে আলটিমেটাম দেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে এক সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা দ্রুত ওই কক্ষ থেকে সরে যান নাজমুলকে নিয়ে। তাঁদের হাতে একটি তালিকা দেখা গেছে। কোন কক্ষে সিট খালি আছে, সেই তালিকা ধরে তাঁরা কক্ষে কক্ষে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নাজমুল হাসান ওই কক্ষে আসেন। রাতে ওই কক্ষে অবস্থান করেন।

আরও পড়ুন

কথা বলে জানা গেছে, নাজমুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁকে রাজনীতি করার শর্তে হলে ওঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি জয়ন্ত ভাইয়ের রাজনীতি করি। তিনি আমাকে হলে তুলেছেন। আমার আবাসিক সুবিধা নেই।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘২০ দিন আগে জয়ন্ত রুমে বস্তা রেখে গেছেন। আমি বলছি, আমার এখনো রেজাল্ট হয়নি, রেজাল্ট হলে তারপর চলে যাব। জয়ন্ত তখন কিছু বলেননি। এর কিছুদিন পর তিন থেকে চারজন এসে সাত দিনের মধ্যে হল ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে এভাবে জুনিয়রের কথা শুনতে হবে, ভাবতে পারি নাই। আরিফের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জন ছেলে এসে রুমে একজনকে উঠিয়ে দিয়ে গেছেন।’

জানতে চাইলে আরিফ বলেন, ‘রুনু ভাইয়ের মাধ্যমে নাজমুলকে হলে ওঠানো হয়েছে। রুনু ভাই, জয়ন্ত ভাইয়ের কাছে পাঠাইছেন। যেহেতু এই হলের দায়িত্বে জয়ন্ত ভাই আছেন, দেখাশোনা সবকিছু; তাই জয়ন্ত ভাইয়ের মাধ্যমে তাঁকে হলে ওঠানো হয়েছে।’

মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওই (নাজমুল) ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে। আমরা জানতে পেরেছি, ওই কক্ষ কিছুদিনের মধ্যেই খালি হবে। তার থাকার সমস্যা দেখে রুনু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ওই কক্ষে তাকে দেওয়া হয়েছে।’ তবে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশটি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন

রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে হলে ওঠার সুপারিশের জন্য অনেকেই আসেন। আমাদের কাছে ছাত্রলীগের কেউ এলে আমরা ওই হলের নেতাদের কাছে বলি। কে, কাকে, কোন হলের নেতারা নিয়ে হলে উঠিয়েছে, সেটা আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে আমি বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।’ আধা ঘণ্টা পর তিনি কল করে বলেন, নাজমুলকে ওই কক্ষে রাখা হবে না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজমুল ৪৩১ নম্বর কক্ষেই রাতে অবস্থান করেন।

এ বিষয়ে মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ শামিম হোসেন বলেন, ‘গতকাল আমার এক আত্মীয় মারা গেছেন। এ জন্য আমার মনটা খুব খারাপ। কালকে ওই শিক্ষার্থী আমার কাছে ফোন করেছিলেন। আমি বলেছি, যার আবাসিক সুবিধা আছে, সেই ওই কক্ষে থাকবে। আমি আজকে হলে গিয়ে বিষয়টা দেখব।’