বরিশালে কর্মশালায় কৃষিবিশেষজ্ঞরা
দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক উপায় বের করা জরুরি
বরিশালে কৃষিবিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলে মাটি ও পানিতে যে হারে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে কৃষি খাত মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এই অবস্থায় উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে লবণাক্ততার ব্যবস্থাপনায় উন্নত ও আধুনিক উপায় বের করা জরুরি। একই সঙ্গে লবণসহিষ্ণু জাতের ফসলের বীজ কৃষকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে।
নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির অর্থায়নে সোমবার বরিশাল নগরের গড়িয়ারপাড় এলাকায় ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই কর্মশালা করে কর্ডএইড বাংলাদেশ। এতে কৃষি, মৃত্তিকাবিজ্ঞানী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএডিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আবদুল্লাহ সাজ্জাদ। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শওকত ওসমান।
কর্মশালায় বরিশাল আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এফ এম মামুন বলেন, বরিশাল বিভাগের মাটি ও পানিতে অস্বাভাবিক হারে লবণাক্ততা বাড়ছে। এটা অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। লবণাক্ততা ক্রমেই উজানে সম্প্রসারণ হচ্ছে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পানির সহনীয় লবণাক্ততার মাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিএস/এম (ডেসিসিমেন পার মিটার) হলেও এ অঞ্চলে লবণাক্ততার মাত্রা অনেক বেশি। ভূগর্ভস্থ পানির উৎসেও মারাত্মক মাত্রার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বরগুনা ও পটুয়াখালীতে লবণাক্ততার মাত্রা বেশি। গত মে মাসের মাঝামাঝি বলেশ্বর, পায়রা, গলাচিপা, আন্ধারমানিক—চারটি নদীর পানিতে অসহনীয় লবণাক্ততার উপস্থিতি পেয়েছেন তাঁরা। এই মাত্রা শূন্য দশমিক ৮১ থেকে ১১ দশমিক ৫৬ ডিএস/এম পর্যন্ত।
কর্মশালায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক (ক্ষুদ্র সেচ) মো. মজিবর রহমান, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র কুণ্ডু, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান, ডিপার্টমেন্ট অব ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির।
বক্তারা আরও বলেন, গত মার্চে বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী, আমতলী এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়াতেও লবণাক্ততার উপস্থিতি পান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা। একইভাবে জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ সময় বিশেষে ১৬ থেকে ২৮ দশমিক ৫ ডিএস/এম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। অথচ চাষাবাদের জমিতে লবণ সহনশীলতার সর্বোচ্চ মাত্রা ৪ থেকে ৮ ডিএস/এম। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। মিঠাপানির সংরক্ষণ বাড়ানো, বাঁধগুলো উঁচু করা এবং চাষাবাদে উন্নত, আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে।
নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির অর্থায়নে কর্ডএইড বাংলাদেশ কোস্ট প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় লবণসহিষ্ণু জাতের সম্প্রসারণ, মাটি পরীক্ষা ও লবণাক্ততা দূর করতে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। আয়োজন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের জুলাই থেকে খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে তাঁরা কাজ করছেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় লবণাক্ত পতিত জমির পাঁচ হাজার হেক্টর আবার টেকসইভাবে ব্যবহার করা।
কর্ডএইড বাংলাদেশের হেড অব প্রোগ্রাম ও কৃষি অর্থনীতিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে লবণাক্ততাসহিষ্ণু কৃষির অগ্রযাত্রায় ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রয়াস। যেখানে সরকারি, বেসরকারি খাত এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে একত্রে কাজ করবে। এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করা যাবে।