বগুড়ায় বিএনপির সমাবেশে আসার পথে নেতা-কর্মীদের পুলিশের বাধা, গাড়ি তল্লাশি

বগুড়ায় বেলা তিনটায় স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপির জনসমাবেশ শুরু হয়েছে। শুক্রবার বগুড়ার সূত্রাপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির জনসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া নেতা-কর্মীদের গাড়ি আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। গাড়ি তল্লাশির নামে পথে পথে পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাধা দিচ্ছে বলে জেলা বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে বেলা তিনটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে নেতা-কর্মীরা জনসমাবেশে যোগদান শুরু করেছেন। বেলা সোয়া তিনটায় জনসমাবেশ শুরুর পর স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও নির্যাতন, গায়েবি মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বগুড়া শহরের সূত্রাপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

আরও পড়ুন

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, বগুড়ার সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠের জনসমাবেশে যোগ দিতে সোনাতলা উপজেলার নেতা-কর্মীরা বাস-ট্রাক ও অটোরিকশায় রওনা দেন। গাবতলী মডেল থানার পুলিশ তল্লাশির নামে নেতা-কর্মীদের সেই গাড়ি আটকে দেয়। বেলা তিনটার দিকে সোনাতলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা তিনটি বাসে বগুড়ায় যাচ্ছিলেন। গাবতলী-সুখানপুকুর সড়কের রেলক্রসিং এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকির সামনে পড়ে বাস তিনটি। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর একপর্যায়ে বাস তিনটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিকল্প সড়কে বাস তিনটি বগুড়ায় পৌঁছায়।

অভিযোগের বিষয়ে গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রেলক্রসিং এলাকায় পুলিশের একটি টহল দল আছে। কিন্তু বিএনপির সমাবেশে যোগদান করতে যাওয়া বাস আটকানোর কথা তাঁর জানা নেই।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলায় গণগ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির নেতারা। তাঁদের দাবি, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে ও সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পুলিশ গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার বলেন, বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল করতে বুধবার রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত বগুড়ায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আটক করে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের জনসমাবেশে যোগদান থেকে বিরত রাখতে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আজ দুপুরে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের গাড়ি পথে পথে আটকে তল্লাশির পর ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক নেতা-কর্মী সমাবেশে আসতে পারেননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বগুড়া শহরের সাতমাথায় অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের একদল নেতা–কর্মী । শুক্রবার বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আলী আজগর তালুকদার আরও বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমাবেশ শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। পরে সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে জনসমাবেশ আয়োজন করা হয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফল করতে শহরের ২১টি ওয়ার্ড ছাড়াও ১২টি উপজেলা, ১২টি পৌরসভা এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে। শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশ বানচাল করতে প্রশাসন ও সরকারের নানা কূটকৌশল অব্যাহত আছে। শহরের সাতমাথায় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি তৈরির জন্য উসকানি দিচ্ছে ছাত্রলীগ। তাঁরা কারও ফাঁদে পা দিয়ে সহিংসতায় জড়াতে চান না।

জানতে চাইলে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, চিহ্নিত অপরাধী, অস্ত্রবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান অনেক আগে থেকেই চলমান। কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারেন, সে জন্য থানায় থানায় বিশেষ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা বিএনপির সমাবেশকে ভন্ডুল করতে কোনো ধরনের অভিযান চালানোর অভিযোগ সত্য নয়।