বাকি না দেওয়ার ‘শপথ’ নিয়ে খাবারের দোকান চালু করছেন ‘বাবু ভাই’

বাকিতে খাবার খেয়ে টাকা দিচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে খাবারের দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন ‘বাবু ভাই’
ছবি : প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনের খাবারের দোকানটি আবারও চালু করতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বাবু ভাই’ হিসেবে পরিচিত মো. মানিক হোসেন (৩৩)। ঋণগ্রস্ত হয়ে গত ২২ ডিসেম্বর তিনি দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর প্রতিদিন দোকানের আশপাশে বসে থাকতেন বাকি টাকা তোলার জন্য। শেষ পর্যন্ত বাকির মাত্র ২০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন তিনি। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আগামীকাল রোববার খাবারের দোকানটি আবার চালু করবেন।

মানিক হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী, শুধু করোনার পর ক্যাম্পাস খুললে মানিকের কাছে ১০০-এর বেশি শিক্ষার্থী বাকি খেয়েছেন। তাঁদের কাছে বাকি পড়েছে আড়াই লাখ টাকা। এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা পর্যন্ত তিনি পাবেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আজ শনিবার বিকেলে মানিক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বাকি দিয়ে তিনি একপ্রকার নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাঁর বাকি পড়া আড়াই লাখ টাকার মধ্যে ২০ হাজারের মতো টাকা উঠেছে। ক্যাম্পাস আগামীকাল খুলছে। শিক্ষার্থীরা আশ্বাস দিয়েছেন, ক্যাম্পাস খুললেই ধীরে ধীরে তাঁরা বাকি পরিশোধ করবেন।

শপথ করে বলছি, আর বাকি দিব না। বাকি দেওয়া হবে না—এমন নোটিশ ঝুলাব। আর বাকি রাখা শিক্ষার্থীদের টাকা তোলা হবে।
মো. মানিক হোসেন, খাবারের দোকানদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মানিক বলেন, তাঁর এই দুরবস্থা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমেরিকা থেকে তানভীর ওয়াহিদ নামের একজন ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আজ সকালে আবদুল আলিম নামের এক শিক্ষার্থী ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই পুঁজি নিয়ে আবার দোকান চালু করছেন তিনি।

আরও পড়ুন

মানিক বলেন, ‘শপথ করে বলছি, আর বাকি দিব না। বাকি দেওয়া হবে না—এমন নোটিশ ঝুলাব। আর বাকি রাখা শিক্ষার্থীদের টাকা তোলা হবে।’

এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের নামপরিচয় ও বাকির পরিমাণ তুলে ধরে তা প্রকাশের ঘোষণা দেন মানিক। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের যেকোনো দিন বাকির তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল তাঁর। তালিকা প্রকাশের খবরে বাকি খাওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো শুরু করেন। অনেকে নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে মানিক বলেন, বকেয়া টাকার অপেক্ষায় থাকবেন তিনি। প্রায় এক শ শিক্ষার্থীর তালিকা আছে তাঁর কাছে। তিনি আরেকটু সুযোগ দিতে চান শিক্ষার্থীদের।
মানিক ২০০০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের দোকান চালান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থী হলের ডাইনিং-ক্যানটিনের বাইরে মানিকের দোকানে খেয়ে থাকেন। মানিকের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তাঁর দোকানে ১০ থেকে ১২ জন কাজ করতেন। দোকান বন্ধ হওয়ায় তাঁরাও কাজ হারিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই মানিকের সঙ্গে আবার যোগ দেবেন।

আরও পড়ুন

১৫ হাজার টাকা দিয়ে মানিকের পাশে দাঁড়ানো আবদুল আলিম বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, মানিক একসময় নবাব আবদুল লতিফ হলে ক্যানটিন চালাতেন। খুব যত্ন করে খাওয়াতেন। সংবাদ মাধ্যমে তাঁর বাকি পড়ার খবরে মর্মাহত হয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের এমন বাকি খাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, তাঁর খারাপ লেগেছে। তাই মানিকের দোকান চালু করতে যতটুকু সহায়তা করতে পেরেছেন, তিনি করেছেন।

আবদুল আলিম আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁরা অবশ্যই যেন মানিকের বাকি টাকা পরিশোধ করেন।