হাসি বেগম ভেবে দাফন হওয়া লাশটির আসল পরিচয় সন্ধানে পুলিশ

হাসি বেগম
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের সদরপুরে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন গৃহবধূ হাসি বেগম (২৪)। এরপর শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির লোকজন থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। এরই মধ্যে পুলিশ এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করলে লাশটি মেয়ের বলে শনাক্ত করেন গৃহবধূর মা-বাবা। তাঁকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফনও করা হয়। কিন্তু দাফনের পর ওই গৃহবধূকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পর হাসি বেগম পরিচয়ে দাফন হওয়া লাশটি কার, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ বলছে, লাশটি ভাঙ্গা থানার মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর এলাকার নাউটানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। লাশটি হাসি বেগমের বলে তাঁর বাবা শনাক্ত করেছিলেন। এখন হাসি বেগম জীবিত উদ্ধার হওয়ায় লাশটির পরিচয় শনাক্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। লাশের ডিএনএ সংগ্রহ করা আছে। পাশাপাশি ভাঙ্গার আশপাশের থানায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসি বেগম সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। ৭ সেপ্টেম্বর একই উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বড় বাড়ি এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় মেয়েকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ করেন হাসির বাবা। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পাল্টা অভিযোগ করেন, হাসি টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়েছেন। পরে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা-সংলগ্ন ভাঙ্গার নাউটানা এলাকায় কচুরিপানার ভেতর থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি মেয়ের নয় বলে জানান হাসির বাবা ও মা। কিন্তু এক দিন পর পায়ের আঙুল ছোট ও গলার কবজ দেখে লাশটি হাসি বেগমের বলে শনাক্ত করেন হাসির বাবা ও ফুফু। পরে ময়মনাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর লাশ হস্তান্তর করা হয়।

হাসি বেগমের স্বজনেরা জানান, সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবি গ্রামে ভুবনেশ্বর নদীর পাড়ে স্থানীয় শৌলডুবি নূর এ মদিনা কবরস্থানে গত শনিবার ওই লাশ দাফন করা হয়। দাফনের দুই দিন পর হাসি বেগম ফোন করে জানান, তিনি বেঁচে আছেন। এখন দাফন হওয়া লাশটি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম জানান, ২০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়ার পর লাশটি হাসি বেগমের বলে শনাক্ত করেন তাঁর বাবা শেখ হাবিবুর রহমান ও ফুফু নিহারণ বেগম। ময়নাতদন্তের পর লাশটি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখন হাসি বেগম জীবিত পাওয়া যাওয়ায় জানা গেল, লাশটি অন্য কোনো নারীর। লাশটি ১২ থেকে ১৫ দিনের পুরোনো হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন লাশটির পরিচয় উদ্‌ঘাটন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হলো পুলিশের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ওসি জিয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, লাশটি কার জানার পর আশপাশের থানায় তথ্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। লাশ শনাক্ত করাসহ হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের পুলিশ উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গতকাল বুধবার বিকেলে ফরিদপুরের আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর বাবাকে ফাঁকি দিয়ে আবার উধাও হয়েছিলেন হাসি বেগম। হাসি বেগমকে আদালত প্রাঙ্গণে তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে যান বাবা শেখ হাবিবুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হাসি বেগমের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে হাসি বেগমের বাবার ধারণা, তাঁর মেয়ে আবার ময়মনসিংহের নান্দাইলে চলে গেছেন।

হাবিবুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। সে কোথায় গেছে তা-ও আমার জানা নেই। আমি জানার চেষ্টাও করিনি। তাঁর (হাসি) কোনো মোবাইল নম্বর আমার কাছে নেই।’

আরও পড়ুন

নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফরিদপুরের সদরপুর থানা-পুলিশের সহায়তায় নান্দাইলের জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে হাসি বেগমকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে তাঁকে সদরপুর থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসি বেগম আবার সেখানে গেছেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।