যাত্রীসংকটে থাকা মাদারীপুরের বাসগুলো ‘রমজান উপলক্ষে’ ভাড়া কমাল

ঢাকা-মাদারীপুর রুটে চলাচলরত বাসগুলো গতকাল শুক্রবার থেকে আগের ভাড়ায় ফিরছে। সম্প্রতি মাদারীপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ভাড়া বাড়ানোর পর যাত্রীসংকটে ভুগতে থাকা ঢাকা-মাদারীপুর পথে চলাচলরত বাসগুলো ‘পবিত্র রমজান উপলক্ষে’ আগের ভাড়ায় ফিরেছে। গতকাল শুক্রবার থেকে এ পথে চলাচলকারী নন–এসি বাসগুলো ৩০০ টাকা এবং এসি বাসগুলো ৩৫০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে।

এর আগে এক লাফে ১০০ টাকা ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ঢাকা-মাদারীপুর পথে চলাচলকারী বাস বয়কটের ডাক দেন অনেক যাত্রী। অভিনব এ আহ্বানে সাড়া পড়ে যায়। এতে করে যাত্রীসংকটে পড়ে ঢাকা-মাদারীপুর পথের বাসগুলো। দীর্ঘ এক মাস ১০ দিন পর পরিবহন কোম্পানিগুলো আগের ভাড়ায় ফেরায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। বাসমালিকেরা বলছেন, রমজান মাস উপলক্ষে ভাড়া কমানো হয়েছে। ২০-২৫ দিন পর আবার বর্ধিত ভাড়াই আদায় করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির একটি সভায় মাদারীপুর-ঢাকা সড়কপথে চলাচলরত সার্বিক, চন্দ্রা, সোনালী ও মাদারীপুর পরিবহন নামের চারটি কোম্পানির নন–এসি বাসের ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করা হয়, যা পরের দিন থেকে কার্যকর হয়। হঠাৎ ভাড়া বাড়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে যাতায়াত করলেও শুরু থেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে ভাড়া বাড়ার প্রতিবাদে সরব ছিলেন সাধারণ যাত্রীরা।

আরও পড়ুন

যাত্রীদের একটি বড় অংশ মাদারীপুরের বাস বর্জন করে বরিশালের বাস যাতায়াত শুরু করে। অনেকে আবার বিকল্প পথে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় যাতায়াত করেন। এ কারণে মাদারীপুর-ঢাকা রুটের প্রতিটি বাসই প্রায় অর্ধেক যাত্রী, কখনো অর্ধেকের কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হতো। এ নিয়ে ৭ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ফেসবুকে ঢাকা-মাদারীপুরের বাস বর্জনের ডাক অনেক যাত্রীর’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এমন অবস্থায় মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি বলছে, রমজান মাস উপলক্ষে মানবিক কারণে এক শ টাকা বাসভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোজার পড়ে এ ভাড়া আবার আগের স্থানে চলে আসবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চন্দ্রা পরিবহনের এক সুপারভাইজার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাড়া বাড়ার পরে অনেক কম যাত্রী গেছে। অর্ধেক বা তার থেকেও কম। প্রতিদিন মালিকপক্ষ লসে ছিল। আমরা বাধ্য হয়ে ৪০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা করে ডাকলেও যাত্রীরা বাসে উঠত না। তারা বলত, ৩০০ টাকা মুখে কমালে হবে না ঘোষণা দিয়ে কমাতে হবে। এখন বাসভাড়া ঘোষণা দিয়ে কমানো হয়েছে। আশা করছি, আমরা আবার আগের অবস্থানে ফিরব।’

মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সমিতির বিশেষ সভায় বাসভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ ছাড়। এ ছাড় ২০ থেকে ২৫ দিন চলবে। মানবিক কারণে ছাড় দিচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের (শাজাহান খান) সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের পর মাসুদ রানা নামের এক যাত্রী একটি টিকিটের ছবি তুলে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আজকে (গতকাল) থেকে রমজান উপলক্ষে মাদারীপুরের সব পরিবহন ভাড়া ছাড় দিয়েছে, যা মাদারীপুরের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু যেকোনো সময় তাদের সুবিধামতো আবার ভাড়া বাড়ানো হবে। বিষয়টি সবার সতর্ক থাকতে হবে।’

চন্দ্রা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিত ভূঁইয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারীপুর থেকে ছাড়া চারটি কোম্পানির বাসভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরাও একমত হয়েছি। রমজানের এক মাস উপলক্ষে এ ছাড় চলবে। পরবর্তী সময় ভাড়া আবার আগের জায়গায় ফিরবে।’

মাদারীপুর পরিবহন কোম্পানির পরিচালক মানিক হাওলাদার বলেন, ‘যাত্রীদের স্বার্থ আমরা দেখছি। তাঁদের চাওয়াটাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা প্রয়োজনে নন–এসি বাসের ভাড়া সব সময়ের জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব রাখব।’