সাংবাদিক রব্বানি হত্যাকাণ্ডে আসামি গ্রেপ্তারে প্রশাসনের ভূমিকা ‘রহস্যজনক’
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি ওরফে নাদিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক নেতারা। রব্বানি হত্যার ৩৫ দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যা মামলার এজাহারে থাকা বাকি ১৭ আসামিকে ধরতে না পারায় তাঁরা এমনটি মনে করছেন।
সাংবাদিক রব্বানি হত্যার প্রতিবাদ, আসামি গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের পাটহাটি এলাকায় আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিকেরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকাস্থ জামালপুর সাংবাদিক ফোরাম ও বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের যৌথ আয়োজনে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলায় কর্মরত সাংবাদিক, সচেতন নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
গোলাম রব্বানির গ্রামের বাড়ি বকশীগঞ্জ উপজেলার গোমের চরে। আজ দুপুর ১২টার দিকে সেখানে যান ঢাকার সাংবাদিক নেতাসহ ময়মনসিংহ বিভাগে কর্মরত সাংবাদিকেরা। তাঁরা রব্বানির শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং তাঁর কবর জিয়ারত করেন। বেলা একটার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন তাঁরা। সমাবেশের শুরুতে রব্বানির স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউল করিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় সমাবেশে জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সহসভাপতি মোশারফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়, ময়মনসিংহ নিউজ চ্যানেল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম হুসাইন শাহীদ, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ জলিল ও নিহত সাংবাদিক রব্বানির মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মামলা হওয়ার আগেই এজাহারে থাকা পাঁচ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর এক মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এজাহারে থাকা বাকি ১৭ আসামিকে ধরতে পারেনি। ওই আসামিরাই সশস্ত্র হামলা করেছিল। হত্যাকাণ্ডের ৩৫ দিনে পুলিশ একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করছেন। এতে প্রমাণিত হয় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। প্রশাসন যদি মনে করে, সাংবাদিক সমাজ ঘুমিয়ে আছে, তাহলে আপনারা (স্থানীয় প্রশাসন) ভুল করবেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করতেই হবে এবং সেটি দ্রুতগতিতে করতে হবে। সব আসামির গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক সমাজ ঘরে ফিরবে না।
আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার পর গত ৩৫ দিনে বাকি ১৭ জনের কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। এতে সবার মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আসামিরা তো দেশ ছেড়ে যাননি। তাহলে গ্রেপ্তার হচ্ছেন না কেন? এসব প্রশ্ন এখন সবার। তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা।
রব্বানি হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন জামালপুর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রধান আসামিসহ এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। এজাহারে থাকা ১৭ আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। যেকোনো সময় তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের কথা বলেন তিনি।
গোলাম রব্বানি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন তিনি। ঘটনার পরদিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহত রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বরখাস্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।