সার্কাসে নিয়ে যেতে পোষা হাতির পায়ে শিকল পরানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মাহুত গোলাম মোস্তফা। কিন্তু কোনোভাবে রাজি হচ্ছিল না ‘আমীর বাহাদুর’ নামের হাতিটি। একপর্যায়ে ধাক্কা মেরে মোস্তফাকে ফেলে দেয় হাতিটি। এরপর হাতিটি শুঁড় দিয়ে বুকে চাপা দেওয়ায় সেখানেই মারা যান তিনি।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাড়ারগজ সংরক্ষিত বনের বড়থল এলাকায় গতকাল সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গোলাম মোস্তফার (৪২) বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায়। এর আগে গত মে মাসে একই হাতির আক্রমণে রাসেল মিয়া (৪০) নামের আরেক মাহুতের (হাতি দেখাশোনাকারী) মৃত্যু ঘটে।
পুরুষ পোষা হাতিটির মালিক কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতিটিকে নিয়ে বড় বিপদে পড়েছি। আরেক মাহুত মারা গেল। আগেরবারের দুর্ঘটনার পর বেশ কিছুদিন বাড়িতে হাতিটিকে আটকে রেখেছিলাম। কেন যে মাঝেমধ্যে সে রেগে যায়, বুঝতে পারছি না।’
প্রত্যক্ষদর্শী তিন-চারজন মাহুতের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমীর বাহাদুরসহ ছয়-সাতটি পোষা হাতি দীর্ঘদিন ধরে হাড়ারগজ সংরক্ষিত বনে বিচরণ করছে। মালিক আমীর বাহাদুরকে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে সার্কাস অনুষ্ঠানে ভাড়া দেন। বগুড়ায় একটি সার্কাস অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঁচ-ছয়জন মাহুতের সহযোগিতায় গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাতিটিকে বনের ভেতর থেকে বের করে বড়থল এলাকায় আনা হয়। এ সময় মাহুত গোলাম মোস্তফা তার সামনের একটি পায়ে কাঁটাতারের শিকল পরানোর চেষ্টা চালান। তবে হাতিটি বাধা দিচ্ছিল। বারবার পা সরিয়ে নিচ্ছিল। একপর্যায়ে শুঁড় দিয়ে ধাক্কা মেরে গোলাম মোস্তফাকে ফেলে দেয়। এরপর শুঁড় দিয়ে বুকে চাপ দিতে থাকে। গোলাম মোস্তফার মৃত্যু নিশ্চিত হলে হাতিটি বনের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
মাহুতেরা বলেন, গত মে মাসে ওই হাতি বনের বাঁশ ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। বন বিভাগের লোকজন তাকে সরিয়ে নিতে মালিককে বলেন। হাতিটিকে বাড়িতে নিয়ে ফেরার সময় তার আক্রমণে মাহুত রাসেল মিয়া মারা যান। রাসেলের বাড়ি কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবীর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত গোলাম মোস্তফার বুকে ক্ষত দেখা গেছে। ঘটনার পর হাতি জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে। নিহত ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অপমৃত্যুর মামলা হবে।
এ বিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাঝেমধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে জৈবিক তাড়নায় হাতি উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এ সময়টা মাহুতেরা আঁচ করতে পারেন। এ সময় ছাড়া হাতি কেন হঠাৎ মাহুতদের ওপর খেপছে, এটার কারণ অনুসন্ধান দরকার। এ নিয়ে মাহুতদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মাহুতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।