রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু, চাষিদের নানা অভিযোগ
রংপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এই আম বাজারজাতকরণের ঘোষণা দেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগ যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আমচাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় আমচাষিরা হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মান উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন জানান, এ বছর মিঠাপুকুরে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদন হবে। আমের বাজারমূল্য, কুরিয়ার সার্ভিস, পরিবহন—সবকিছু মিলে শুধু পদাগঞ্জ হাটে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। হাঁড়িভাঙা আমের বাজারজাতকরণ সময়সীমা বাড়াতে তিন থেকে চার ইঞ্চি বোঁটাসহ আম সংগ্রহ, কুসুম গরম পানিতে ধৌতকরণ ও বরিক অ্যাসিড দিয়ে প্লে করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চাষিদের। এ ছাড়া হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। উত্তম কৃষিচর্চা ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি বিভাগ হাঁড়িভাঙা আমের গুণগত মান ও বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
আমচাষি মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, প্রতিবছর হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসার আগে তারিখ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এ বছর জেলা প্রশাসন থেকে আগে কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। কৃষি বিভাগ গত বছরের মতো এবারও ২০ জুন আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষণা করে। তবে পরে পাঁচ দিন এগিয়ে আনে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। আগে থেকে তারিখ ঘোষণা না করায় দূরের আম ব্যবসায়ীরাও সময়মতো আসতে পারছেন না। এতে আমচাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
আরেক চাষি জহিরুল ইসলাম বলেন, হাঁড়িভাঙা আম সুস্বাদু। এটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এর বাজারজাতকরণের সময়সীমা (সেলস লাইফ) খুব কম। এ কারণে প্রতিবছর অনেক আম নষ্ট হয়। হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষায়িত হিমাগার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
আমচাষি আইয়ুব আলী বলেন, জেলা প্রশাসন আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষণা না করায় ঈদের পর থেকে অনেকে অপরিপক্ব আম বাজারে বিক্রি করেছেন। এভাবে অপরিপক্ব আম বাজারজাত করা হলে হাঁড়িভাঙা জিআই পণ্য থেকে বঞ্চিত হবে। হাজারো আমচাষি পথে বসে যাবেন।
আমচাষিরা অভিযোগ করেন, হাঁড়িভাঙা আমের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পদাগঞ্জ বাজার। এটি মিঠাপুকুরের ঘোড়াগাছ ইউনিয়নে হলেও মিঠাপুকুর থেকে দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। রংপুর থেকে ২৪ কিলোমিটার। বদরগঞ্জ থেকে ১২ কিলোমিটার। অথচ এখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা নেই। রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা আম পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারি এনামুল হক, জেলা বিএনপির সদস্য সাজিদুর রহমান, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে হাঁড়িভাঙা আম নির্ধারিত সময়ের আগে এসেছে। হাঁড়িভাঙা আমের একটি সমস্যা, পাকলে এটি নরম হয়ে যায়, ভেতরে গলে যায়। এ জন্য রংপুরে আমকেন্দ্রিক শিল্পকারখানা প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বিশ্ববাজারে হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি করতে গুণগতমান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘হাঁড়িভাঙা আমের মূল বাণিজ্যিক এলাকা পদাগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়, যাতে আমচাষিরা সহজে আম বাজারজাতকরণ করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’ জিআই পণ্যের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমের অতিরিক্ত হরমোন ও কার্বাইড প্রয়োগ বন্ধে আমবাগানের মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
মতবিনিময় সভা শেষে পদাগঞ্জ বাজার পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় ব্যবসায়ীরা হাটের জন্য নির্ধারিত জমি, শেড, ড্রেনেজ–ব্যবস্থা এবং আশপাশের কাঁচা রাস্তাগুলো সংস্কার ও পাকা করার দাবি জানান।