প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকে ‘বিজয়’ মনে করছে ছাত্রদল

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগের পর ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার দুপুরে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটার তালিকায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে ছাত্রদল। তাদের আন্দোলনের মুখে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার হিসেবে প্রশাসন অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই সিদ্ধান্তের পর রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান ওই কথা বলেন।

আমানুল্লাহ আমান বলেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল। এরপরই প্রতিবাদ করেছে ছাত্রদল। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন পারবে না? এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে ছাত্রদল সোচ্চার ছিল। যার ফলেই প্রশাসন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাঁরা মনে করে, এটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার অন্যতম একটি বিজয়। এই আন্দোলনের কথা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এখানে তাঁদের সঠিকভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ওনারা করতে পারবেন কি না, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রার্থিতা করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আমরা এখনো সন্দিহান। কারণ, সময় খুবই কম। ওনারা এক দিন বাড়িয়েছেন। নির্বাচনে ছবিযুক্ত ভোটার করলে ভালো হতো। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি নেই। এটি করলে আরও ভালো হতো।’

ভোট গ্রহণের তারিখ নিয়ে আমানুল্লাহ আমান বলেন, নির্বাচনের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর। এর দুই দিন পরেই হিন্দুধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। তাঁরা উৎসবের সঙ্গে সেটি পালন করতে এক-দুই দিন আগে বাড়িতে যান। তাঁরা বাড়িতে গেলে নির্বাচনে তাঁরা অনুপস্থিত থাকবেন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসন নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে অথবা পিছিয়ে আনতে পারে। যাতে হিন্দুধর্মাবলম্বী যাঁরা আছেন, তাঁদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে।

আরও পড়ুন

এমফিল ও দ্বিতীয় মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সুযোগের বিষয়ে আমানুল্লাহ আমান বলেন, ডাকসু, রাকসু ও জাকসু একই মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুটি প্রতিষ্ঠানে বয়সসীমা উঠিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি এমফিল ও অন্যান্য মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বয়সসীমা উঠিয়ে দিলেও ভোট করতে দেয়নি। এটা একধরনের স্ববিরোধিতা। জুলাই যোদ্ধাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁদের উচিত ছিল একই প্রক্রিয়ায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নেবেন কে নেতা হবেন, আর কে না হবেন।

গত রোববার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের একটি চেয়ার ভাঙচুর ও একটি টেবিল উল্টে দেন। পরে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে এলে তাঁদের ঘিরে ধরেন ছাত্রদলের কর্মীরা। দুপুরের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও কয়েকজন সাবেক সমন্বয়কের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসেন। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

আরও পড়ুন

দফায় দফায় ধস্তাধস্তি ও বাগ্‌বিতণ্ডার পর সমন্বয়কদের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থীরা রাকসু ভবনের ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপরও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ফটকে অবস্থান করছিলেন। বেলা একটার দিকে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে আরেক দফা ধস্তাধস্তি হয়। তাঁদের প্রতিরোধে ছাত্রদল রাকসু কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যান। চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা দুইটার দিকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। গতকাল সোমবারও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রশাসন ভবনের সামনে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

আরও পড়ুন