ঈদের দিন মাধবকুণ্ডে লাখো পর্যটক

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রবেশ ফটকের সামনে টিকিট কিনতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল শনিবার
ছবি: প্রথম আলো

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের ঈদে মৌলভীবাজারে বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বেড়ানো নিষেধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে গত বছরের দুই ঈদে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও পর্যটক আনাগোনা ছিল কম। তবে এবারের ঈদে সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বেড়াতে এসেছেন। গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেই সেখানে প্রায় এক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। প্রবেশফটকে টিকিটি বিক্রির তথ্য থেকে জলপ্রপাত ইজারাদার কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

সরেজমিন গতকাল বিকেলে দেখা যায়, মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাঁঠালতলি বাজার থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পর্যটনকেন্দ্রের পাকা সড়কটি ভীষণ ব্যস্ত। পর্যটকেরা বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে হইহুল্লোড় করে ছুটে চলেছেন। জলপ্রপাতের প্রবেশফটকের সামনে কাউন্টারে টিকিট কিনতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। টিকিট কেটে হেঁটে জলপ্রপাতের দিকে এগোতেই দেখা গেল, জলপ্রপাতে পানি পড়ার স্থানে রশি টেনে রাখা। স্থানটি গভীর ও বিপজ্জনক হওয়ায় পর্যটকেরা যাতে সেখানে যেতে না পারেন—সে জন্য এ ব্যবস্থা। জলপ্রপাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ পাশের ছড়ায় গোসল সারছেন।

পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার এলাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে আসা আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, ‘সময় পেলে মাঝেমধ্যে এখানে আসি। খুব ভালো লাগে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাই। বাইরে ভ্যাপসা গরম থাকলেও এ জায়গাটা বেশ শীতল লাগছে।’

জলপ্রপাতে পানি পড়ার স্থানটি গভীর ও বিপজ্জনক হওয়ায় সেখানে না যেতে ট্যুরিস্ট পুলিশের মাইকিং। গতকাল শনিবার
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার জেলা সদরের একটি ওষুধে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সবুজ রায়ের বাড়ি রংপুরে। ঈদের ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমবারের মতো এসেছেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে। সবুজ বলেন, ‘জলপ্রপাতে পানি কম, তবুও জায়গাটা ঘুরে ভালো লেগেছে।’

বড়লেখা উপজেলার পকুয়া গ্রামের একদল তরুণ একই রঙের পাঞ্জাবি পরে বেড়াতে এসেছেন। তাঁদের একজন শরীফুল ইসলাম বললেন, ‘এলাকায় বেড়ানোর জায়গা তো এই একটাই। সবাই মিলে পানিতে নেমে গোসল করব, ঘুরব।’

আরও পড়ুন

জলপ্রপাতের কাছে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গিটার বাজিয়ে গান গাইছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহসিন। তিনি বলেন, ‘কোথাও বেড়াতে গেলে গিটার সঙ্গে নিয়ে যাই। গান গাই, আনন্দ পাই।’

জলপ্রপাতের কাছে তৈরি পাকা সিঁড়ি দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। পর্যটকেরা সেখানে গোসলে নেমে পড়েন। গতকাল শনিবার
ছবি: প্রথম আলো

পর্যটকদের ছবি তুলে দিতে ব্যস্ত সময় কাটছিল স্থানীয় আলোকচিত্রী তাজ উদ্দিন ও মুসা আহমদের। মাধবকুণ্ডে তাঁদের মতো আরও ১০ থেকে ১২ জন আলোকচিত্রী আছেন। ব্যবসা মোটামুটি ভালো চলছে বলে জানান তাঁরা। ছবি তোলার পর পর্যটকেরা মেমোরি কার্ডে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাত সদস্যের একটি দল পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। সেখানে দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, জলপ্রপাতে গোসল করতে নেমে অতীতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাই জলপ্রপাতের কাছাকাছি গিয়ে গোসল না করতে রশি টানিয়ে সীমানা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। হ্যান্ডমাইকেও এ ব্যাপারে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।

কাউন্টারে থাকা জলপ্রপাত ইজারাদার কর্তৃপক্ষের কর্মচারী সাজু আহমদ জানান, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অন্তত এক লাখ পর্যটক টিকিট কেটেছেন। ঈদের ছুটিতে আরও পর্যটকদের সমাগম ঘটবে বলে তাঁরা আশা করছেন।