প্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামানই পেলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১১ জন। তাঁদের মধ্যে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বেছে নিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। এর ফলে কে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে এত দিন ধরে চলা সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটল। শেষ পর্যন্ত আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে তিনিই নির্বাচন করছেন।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এর ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীর সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই বেশি ছিল। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দলের কোনো নেতা-কর্মীরই নেই। তাই দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁর পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাসে ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি। এরপরই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনোনয়ন পেতে তৎপর হন। এসব নেতা দীর্ঘদিন ধরে পোস্টার, ফেস্টুন সাঁটিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দেওয়ার পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়েও অনেকে গণসংযোগ চালান।

তবে গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘোষণা দেন, মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দল তাঁকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছে। এরপর স্থানীয় একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রবাসী প্রার্থীর বদলে স্থানীয়ভাবে ত্যাগী ও পরীক্ষিত কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দলকে নানাভাবে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চালান। এমন অবস্থায় নগরজুড়ে আলোচনা শুরু হয়, প্রবাসী নাকি দেশি প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন? মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি এ অবস্থানে দলীয় দ্বিধাবিভক্তিও ক্রমশ বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, গত ২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ওই দিন হাজারো কর্মী-সমর্থক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে নিয়ে আসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান অন্যতম। পরে ২৬ জানুয়ারি তিনি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন। এর পর থেকেই জোরেশোরে আলোচনায় আসে তাঁর নাম।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আনোয়ারুজ্জামান গত দুটি সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর ছিলেন। তিনি মহানগরের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তও নন। এ ছাড়া তিনি একজন প্রবাসী। এ জন্যই স্থানীয়ভাবে যাঁরা ত্যাগী ও পরীক্ষিত, তাঁদের মধ্যে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তোলেন অনেকে। এখন আনোয়ারুজ্জামান মনোনয়ন পাওয়ায় অন্য নেতারা যদি ভেতরে–ভেতরে নিষ্ক্রিয় থাকেন, তাহলে দলীয় প্রার্থীর জয় পাওয়া অনেকটাই মুশকিল হবে।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া আরও ১০ জন দলের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও আবদুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ ও ছালেহ আহমদ, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।

মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর তালিকায় থাকা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন পাইনি। তবে দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁর পক্ষেই আমরা কাজ করব। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা এককাট্রা হয়ে বিজয় নিশ্চিত করতে সংগঠিত থাকবে।’ তবে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব যায়নি।

আগামী ২১ জুন ইভিএম পদ্ধতিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।