ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান। দিনাজপুর শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত ময়দানে সাত থেকে আট বছর আগেও ছোট পরিসরে ঈদের নামাজ আদায় করা হতো। কিন্তু ২০১৭ সালে এখানে সংস্কারকাজ, স্থাপনা নির্মাণসহ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। এর পর থেকে এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। প্রতিবছর পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন এই মাঠে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির ভাষ্য, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে ছোট পরিসরে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। ২০১৫ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ঈদগাহ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালে শেষ হয়। এর পর থেকে ঈদের জামাতে লোকসমাগম বেড়েছে কয়েক গুণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি জেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে মিনারটি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গোর-এ-শহীদ ময়দানে স্থাপিত ঈদগাহের মিনারটি তৈরি করা হয়েছে মোগল স্থাপত্যরীতিতে। এর অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে ছিল দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছিল চার কোটি টাকা। সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠের আয়তন ২২ একর। মিম্বারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট ঈদগাহ মিনারের দুই প্রান্তে দুটি মিনারের উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝের দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট ও টাইলস করা মিম্বারের উচ্চতা ৪৭ ফুট। প্রতিটি গম্বুজে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। মসজিদে নববি, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপত্যশৈলীর আদলে তৈরি করা হয়েছে মিনারগুলো।
ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ মাঠের নাম নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। জেলার কয়েকটি ইতিহাসগ্রন্থ থেকে জানা যায়, এ মাঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উত্তর ফ্রন্টের সমাবেশ হয়েছিল। পরে মাঠটি সেনাবাহিনীর নামে রেকর্ডভুক্ত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পারস্য থেকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে এসে মৃত্যুবরণ করেন শাহ আমিরউদ্দিন ঘুরি (রহ.)। পরে সময়ে মাঠসংলগ্ন স্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আমিরউদ্দিন ঘুরি ঘোড়ায় চড়ে দিনাজপুরে ইসলাম প্রচার করেন। সে জন্য এ মাঠের নামকরণ করা হয়েছে গোর-এ-শহীদ।
আরেকটি জনশ্রুতি হলো, সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহের আমলে ইসলাম প্রচার নিয়ে ৪০ জন সুফি সঙ্গে ওই সময়ের এক হিন্দু রাজার যুদ্ধ হয়েছিল। সুফিদের একজন প্রাণ হারান। সেখানেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়। ফারসিতে আরবি শব্দ কবর বলা হচ্ছে গোর। ওই সময়কার মুসলিম শাসকের ভাষা ফারসি হওয়ায় মাঠটি পরিচিতি পায় গোর-এ-শহীদ ময়দান হিসেবে।
দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর এই মাঠে ঈদের জামাতে নামাজ পড়ি। এটি দিনাজপুর তথা পুরো দেশের ঐতিহ্য। ঈদগাহ মিনারটি নির্মিত হওয়ায় মাঠের গুরুত্বটা আরও বেড়েছে। এত বড় মাঠে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করা সত্যিই গর্বের।’
সারা বছরই মাঠের পরিচর্যা দরকার বলে মনে করেন সফিকুল হক। তিনি বলেন, এবার প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন ঈদ জামাত উপলক্ষে বয়স্কদের জন্য হলেও মাঠের একাংশে শামিয়ানার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আজ শনিবার সকাল নয়টায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হয়। নামাজে ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল হক কাসেমি। ঈদের জামাতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।
ঈদের জামাত শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ। এবার দিনাজপুরসহ পাশের বিভিন্ন জেলার ছয় থেকে সাত লাখ মুসল্লি এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।