রশির খণ্ডিত অংশের সূত্র ধরে কৃষক হত্যাকারী ভাইকে ধরার দাবি পুলিশের

কুষ্টিয়ায় কৃষক মফিজ হত্যার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ছোট ভাই আব্দুল আজিজ
ছবি: প্রথম আলো

যে রশি দিয়ে ভাইয়ের হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়েছিল, সেই রশির খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায় আরেক ভাইয়ের বাড়িতে। তখন ভাইয়ের লাশের পাশে বসে কাঁদছিলেন ছোট ভাই। পুলিশ খণ্ডিত রশির বিষয়ে জানতে ক্রন্দনরত ভাইকে কৌশলে পাশে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে বড় ভাইকে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন ছোট ভাই।

মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড় ভাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে বড় ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ছোট ভাই। হত্যাকাণ্ডে আরও কয়েক ভাই ও ভাতিজা জড়িত আছেন। পারিবারিক জায়গাজমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

আরও পড়ুন

আজ শনিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম এসব তথ্য দেন। গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ ওরফে খয়বার (৫০) সদর উপজেলার গজনবীপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে যেকোনো সময় গজনবীপুর গ্রামের মাঠে মফিজ মণ্ডল (৬০) নামের কৃষককে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। গতকাল ওই মাঠ থেকে ওই কৃষকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ প্রথমে কোনো ক্লু পায়নি। একপর্যায়ে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জমিজমা নিয়ে ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে মফিজ মণ্ডলের দ্বন্দ্ব ছিল। মফিজেরা সাত ভাই। মফিজ তাঁর বাড়ির মাত্র ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কিন্তু এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তিনি মাঠের আরও তিন শতক জমিও বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে গ্রেপ্তার আজিজ ক্ষেপে যান। অন্যদিকে মফিজও বাড়ির আরেকটি জমিতে ঘর তুলে বাস করেন। সেই জমি থেকেও তাঁকে সরাতে না পেরে বিরোধ আরও বাড়তে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিরোধের জেরে মফিজ মণ্ডলকে হত্যা করে জমি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন আবদুল আজিজ। গত বুধবার সকালে মফিজের স্ত্রী তাঁর মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। এতে আজিজসহ ভাই-ভাতিজারা বাড়িতে যেতে হুমকি দেন। তিনি বাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিত্তিপাড়া মাঠের মধ্যে মফিজকে একা পেয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দুই পা ও গলা বেঁধে মাটির সঙ্গে চেপে ধরে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল লাশ বাড়িতে নেওয়া হলে পুলিশ সেখানে তদন্ত চালায়। আজিজের গতিবিধি ও তাঁর ঘরে থাকা রশির সঙ্গে লাশের হাত-পা বাঁধা রশির মিল পায় পুলিশ। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আজিজ বড় ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূন যায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, বাকি আসামিরা পলাতক। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।