পাঁচ দিন ধরে ১৫ বাস আটক, আলোচনা হলেও সমাধান হচ্ছে না

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবিতে ক্যাম্পাসে ১৫টি বাস আটক রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বাসচাপায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবিতে ক্যাম্পাসে সেলফি পরিবহনের ১৫টি বাস আটকের ঘটনার সমাধান হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষ।

সর্বশেষ আজ সোমবার বিষয়টি সমাধানের জন্য সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে মালিকপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আলোচনায় বসেন। ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি, সহকারী প্রক্টর মো. রনি হোসাইন, সেলফি পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. আব্বাস, সাভার উপজেলায় সদ্য যোগ (আজই) দেওয়া ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদসহ কয়েকজন আলোচনায় বসছিলেন। তবে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়নি।

আরও পড়ুন

অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন, সেলফি পরিবহনের মালিকেরা এবং প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করেছি। যাতে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান হয়। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, আলোচনা চলমান। অতিদ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। আর সেলফি পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. আব্বাস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো আলোচনা শেষ হয়নি, আলোচনা শেষ হলে আপনাকে জানাব।’

গত বৃহস্পতিবার সকালে রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের বাস আটকানো শুরু করে। পরে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা রুবেলের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

এ নিয়ে পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েক দফায় আলোচনায় কোনো সুরাহা হয়নি। শিক্ষার্থীদের দাবি, রুবেলের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ এই পরিমাণ টাকা দিতে নারাজ। তারা প্রথম দফা আলোচনায় তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল। তবে আজ আলোচনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ লাখ থেকে কমিয়ে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

দ্রুত বিষয়টির সুরাহা না হলে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে সব ধরনের পরিবহন বন্ধের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে জানালেন সেলফি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জালালউদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাস আটকের পাঁচ দিন হয়ে গেছে। এখনো বাস ছাড়েনি। গাবতলী বাস টার্মিনাল উত্তপ্ত। বাস মালিক-সমিতির মধ্যে আলোচনা চলছে, কাল-পরশুর মধ্যে বাস না ছাড়লে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন রুবেল। এ সময় সেলফি পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস যাত্রীদের চাপা দেয়। এতে রুবেলসহ দুজন নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ওই দিনই মহাসড়কটিতে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের ২০টি বাস আটক করেন। এর মধ্যে পাঁচটি বাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।