সংরক্ষিত আসনে ঝর্নার মনোনয়নে ‘বিভেদ’ মেটার প্রত্যাশা তৃণমূলে

ঝর্না হাসান
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ফরিদপুর থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্না হাসান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান ওরফে লাবলুর স্ত্রী। জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে ‘বিভক্ত’ জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতারা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদ সংসদ সদস্য হলে দুই পক্ষের এক প্রকার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। এখন ঝর্না হাসান সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পাওয়ায় রাজনীতিতে ভারসাম্য আসবে।

আরও পড়ুন

তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, ঝর্না হাসানের মনোনয়নে দুই পক্ষই খুশি। তাঁরা আশাবাদী, তিনি (ঝর্না) দুই পক্ষকে এক জায়গায় এনে বিভেদ মেটাতে উদ্যোগ নেবেন।

ঝর্না হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনোনীত হওয়ার পর সংসদ সদস্য এ কে আজাদ ভাই ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। সেই আলোকে সভাপতি ও সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুর আওয়ামী লীগকে আমি এক ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নেব।’

আরও পড়ুন

গতকাল বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৪৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই তালিকার ২৬ নম্বরে ফরিদপুরের ঝর্না হাসানের নাম দেখা যায়। সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে ফরিদপুর থেকে অন্তত ১০ জন দলীয় মনোনয়ন কিনেছিলেন। এর মধ্যে ঝর্না হাসানকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১২ মে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে আছেন সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক এবং দুই যুগ্ম সম্পাদক ঝর্না হাসান ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস। অন্য অংশের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদ, সহসভাপতি ফারুক হোসেন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি মাসুদ, সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন।

আরও পড়ুন

সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পান সভাপতি শামীম হক। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এ কে আজাদ। নির্বাচন ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। জনসভায় হুমকি-ধমকির বাইরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়। ভোটে এ কে আজাদ জয়ী হলে দুই পক্ষের একপ্রকার মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি বিপুল ঘোষের অনুসারী সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনের ছেলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যান। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মাসুদের বাড়িতে ছুটে যান। তাঁর ছেলের জানাজায় অংশ নেন। কিন্তু শামীম হক বা ইশতিয়াককে সেখানে দেখা যায়নি। বিবদমান পরিস্থিতিতে শামীম হকের অনুসারী ঝর্না হাসান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হলে দুই অংশের রাজনীতিতে ভারসাম্য আসবে বলে মনে করেন নেতারা।

ঝর্না হাসান মনোনয়ন পাওয়ার পর গতকাল বুধবার রাতে শহরের আলীপুর মহল্লায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আকতারুজ্জামান বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন ভালো হয়েছে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় ক্ষমতার রাজনীতিতে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো ‘প্ল্যাটফর্ম’ ছিল না। এতে সেই শূন্যতা পূরণ হবে। তা ছাড়া ঝর্না হাসানের সঙ্গে সবার সদ্ভাব আছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বিভাজন দূর করে দলকে একতাবদ্ধ করার উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি মনে করেন।

একইভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মোল্লাও বিভেদ ঘোচাতে ঝর্না হাসানের মনোনয়নকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি (ঝর্না) দলকে সুসংগঠিত করতে ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

শামীম হকের অনুসারী ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, ‘অত্যন্ত অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন হাসিবুল হাসান। তাঁর পরিবারকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ মনোনয়নে আওয়ামী লীগের সবাই খুশি। দলে বর্তমানে যে বিরোধ চলছে এবং নির্বাচনের পরে বিরোধ ঘনীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় ঝর্না হাসান কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমরা চাই, সব বিরোধ ভুলে একসঙ্গে চলুক জেলা আওয়ামী লীগ।’

ঝর্নার মনোনয়নকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল ঘোষ। তিনি বলেন, হাসিবুলের মৃত্যুর পর থেকে দলে সক্রিয় ঝর্না। তাঁর আগামী দিনের কর্মকাণ্ড বলে দেবে, তিনি ভালো করলেন না খারাপ করলেন। শামীম ও আজাদের বিরোধে তিনি কতটা ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটা দেখার বিষয়। তিনি (ঝর্না) তো সংসদ সদস্য, সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নন। দলের দ্বন্দ্ব শুরু কমিটি গঠন নিয়ে। দেখা যাক, সামনে কী ঘটে। তাঁরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন।

ঝর্না হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ওপর ভরসা রাখায় নেত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এর মাধ্যমে দলে হাসিবুল হাসানের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমার প্রধান কাজ নারীর উন্নয়ন ঘটানো। পাশাপাশি আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে না পারলে সংকট বাড়বে।’