উখিয়ায় গুলিতে দুই রোহিঙ্গা নেতা নিহতের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

গোলাগুলি
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার জামতলী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৮) দুই রোহিঙ্গা মাঝি (দলনেতা) আবু তালেব (৫০) ও সৈয়দ হোসেন (৪৩) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আবু তালেবের স্ত্রী তৈয়বা খাতুন (৩০) বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং সাত থেকে আটজনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিরা হলেন একই আশ্রয়শিবিরের ডি-৮ ব্লকের বাসিন্দা মাহামুদুল হাসান (২৭), সি-১ ব্লকের বাসিন্দা আবুল কালাম ওরফে জাহেদ আলম (২৫), সি-৬ ব্লকের জাফর আলম (৫৪), সি-১ ব্লকের শাহ মিয়া (৩২) ও সি-৬ ব্লকের মো. সোয়াইব (১৯)। তবে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প-১৫-এর সি-৯ ব্লকের পাহাড়ে গুলি করে আবু তালেব ও সৈয়দ হোসেনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ওই আশ্রয়শিবিরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন

মামলার এহাজারে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে আবু তালেব ও সৈয়দ হোসেন পাহাড়ি বসতির একটি শেডের সামনে বসেছিলেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ জন সেখানে হামলা চালান এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এ সময় আবু তালেব ও সৈয়দ হোসন গুলিবিদ্ধ হন। হত্যা পরিকল্পনার বিষয়ে একই আশ্রয়শিবিরের সি-৪ ব্লকের সাব–মাঝি রেজাউল আলম (৪২), সি-৬ ব্লকের সাব–মাঝি মো. ইয়াছিন (৩২) এবং সি-১ ব্লকের মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে ভলান্টিয়ার (রাত্রিকালীন পাহারা দলের স্বেচ্ছাসেবী) নুর মোহাম্মদ (৩২) ইন্ধন দিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, দুই রোহিঙ্গা মাঝি হত্যার ঘটনায় গতকাল মধ্যরাতে মামলা হয়েছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হলেও আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকণ্ড ঘটেছে বলে তাঁদের ধারণা।

নিহত আবু তালেবের ছোট ভাই আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে মাহামুদুল হাসান ও জাহেদ আলমের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক মাস আগে মাহামুদুল ও জাহেদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কারাভোগের পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসেন জাহেদ ও মাহামুদুল। এর পর থেকে দুজন আবু তালেবকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। জাহেদ ও মাহামুদুল আরসা সদস্য বলে তিনি দাবি করেন। জাহেদ ও মাহামুদুলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবু তালেব ও সৈয়দ হোসেন পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।

একই ক্যাম্পের সি ব্লকের সাব-মাঝি সব্বির আহমদ বলেন, আরসার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাই পরিকল্পিতভাবে দুই আবু তালেব ও সৈয়দ হোসেনকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পর থেকে সাধারণ রোহিঙ্গারা শঙ্কিত।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে দুই রোহিঙ্গা মাঝিকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে আশ্রয়শিবিরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক আছে। আসামিদের ধরতে ক্যাম্পে অভিযান চালাচ্ছে এপিবিএন।