‘টাকার লোভে আমার স্বামীক মারি ফেলছে। ঢাকা যাবার আগে ছয়–সাত হাজার বস্তা আলু বিক্রি করছে। এক টাকাও পাই নাই। ঢাকায় টাকা কালেকশনে গেছে। উনি (অভিযুক্ত জরেজ মিয়া) টাকার লোভে এমন করছে। ফোন দিলে উনি আমার স্বামীর ফোন ধরে বলেন, “আমাক বসিয়ে রেখে কালেকশনে গেছে।” আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন আশরাফুল হকের স্ত্রী লাকী বেগম। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের ফটকের পাশে একটি ড্রাম থেকে তাঁর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙুলের ছাপ মিলিয়ে লাশটি শনাক্ত করা হয়।
আশরাফুলের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করতেন। ১১ নভেম্বর ব্যবসার কাজে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে তিনি ঢাকায় যান।
আজ শুক্রবার বদরগঞ্জে আশরাফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন বাড়িতে ভিড় করছেন। ভেতরে আহাজারি করছেন স্বজনেরা। এলাকায় তাঁর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আশরাফুল হক বাবার একমাত্র ছেলে। তাঁর সংসারে বাবা–মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে আছে। মেয়ে তামিন জাহান (১২) সপ্তম শ্রেণিতে ও ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (৭) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া থাকার পর দেড় মাস আগে দেশে ফেরেন আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়া। এর পর থেকে আশরাফুল হকের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হন। জাপানে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন জরেজ মিয়া।
আশরাফুলের ছোট শ্যালক রেজওয়ান হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুলাভাইয়ের সবকিছু জানে জরেজ ভাই। একই হোটেলে ছিল, একসঙ্গে ঘুম থেকে উঠছে, একসঙ্গে খাইছে। হুট করি দুলাভাইয়ের ফোন ধরে বলছে, “বাইরে গেছে।” একটু পর বলছে, “চট্টগ্রাম গেছে।” কিছুক্ষণ পর বলছে, “আমি কিছু জানি না।” ফোন ডাস্টবিনে পাছি। এতে কী বুঝেন?’
জরেজের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশরাফুলের লাশ উদ্ধারের পর জরেজের বাবা মোয়াজ্জেককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে।
জরেজের স্ত্রী উম্মে কুলসুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০ বছরের বেশি সময় ধরে ওদের বন্ধুত্ব। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আশরাফুল ভাইয়ের ব্যবসার টাকা কালেকশন করার কথা বলি বাড়ি থাকি বের হয়। বুধবার রাতে কথা হইছে। তখন চট্টগ্রামে পৌঁছাইছে বলছে। ঢাকা কবে আসছে বা ঢাকায় যে আছে, সেটাও জানি না। আমি জানি চট্টগ্রামে আছে।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা হবে। একজনকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দল তাঁকে জিজ্ঞেসাবাদ করবে। আমরা সহযোগিতা করছি।’