সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। নগরের ধোপাদিঘিরপাড় ওয়াকওয়ের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা পাঁচটার দিকে দাঁড়িয়ে পড়েন। পরনে তাঁর হাঁটার পোশাক আর পায়ে কেডস। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘হাঁটার উন্মুক্ত পরিবেশ চাই’। তাঁর এ প্রতিবাদ দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছিলেন পথচারীরা। মূলত সিটি করপোরেশন কর্তৃক ওয়াকওয়েটি ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদেই ছিল তাঁর এ কর্মসূচি।
কর্মসূচি চলে টানা সোয়া এক ঘণ্টা। এ সময়ের মধ্যে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ও সমাজ সংগঠক যোগ দেন। কর্মসূচিতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘ধোপাদিঘি একসময় পানিতে টইটম্বুর করত। ধীরে ধীরে এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে ভারত সরকারের অর্থায়নে দিঘিটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে চারপাশে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সম্প্রতি সিটি কর্তৃপক্ষ এটি ইজারা দিয়েছে। ফলে এখানে ঢুকতে গেলে প্রত্যেককে প্রতিবারের জন্য ৫ টাকা দিতে হচ্ছে।’
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেটের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। তাঁর কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ পিপি সারওয়ার আহমেদ চৌধুরী আবদাল, প্রবীণ আইনজীবী কিশোর কুমার কর, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমর বিজয় সী শেখর প্রমুখ।
ধোপাদিঘি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে চারপাশে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সম্প্রতি সিটি কর্তৃপক্ষ এটি ইজারা দিয়েছে। ফলে এখানে ঢুকতে গেলে প্রত্যেককে প্রতিবারের জন্য ৫ টাকা দিতে হচ্ছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ২১ কোটি ৮৫ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ধোপাদিঘিরপাড় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। ২০১৯ সালে এ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালে। পরে ২০২২ সালের ১১ জুন এর উদ্বোধন করা হয়।
ওয়াকওয়েটি উদ্বোধনের পরই সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি সিটি কর্তৃপক্ষ স্থানটি মেসার্স ইষান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়। এর পর থেকে এখানে প্রবেশ করতে হলে প্রত্যেককে ৫ টাকা করে দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল পার্কিং ফি বাবদ গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান ভেতরে চটপটি, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানও বসিয়েছে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি নীতিমালা তৈরি করেই স্থানটি ৬০ লাখ টাকায় একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে এবং বাকি ৪৫ লাখ টাকা পেয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে নীতিমালা অনুযায়ী, হাঁটাচলা করতে যে কেউ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত এখানে বিনা মূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘ইজারা দেওয়ার ফলে দিঘি, ছড়া উদ্ধার হলেও নগরবাসী প্রকৃত সুফল পাচ্ছেন না। এসব স্থানে নগরবাসীর নির্বিঘ্নে হাঁটাচলার পরিবেশও নিশ্চিত হচ্ছে না। নগরের যেসব ওয়াকওয়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে, শিগগিরই ইজারা প্রথা বাতিল করে জনগণের হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত করে দেওয়া হোক। আর এ দাবিতেই প্ল্যাকার্ড হাতে নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’