দিনভর নানা ঘটনার পরেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফেরেননি, রেলপথে অবস্থান

ঢাকা–রাজশাহী রেলপথে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এখনো শান্ত হননি। দিনভর নানা কর্মসূচির পরও শিক্ষার্থীরা হলে বা ছাত্রাবাসে ফেরেননি।

সর্বশেষ আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে চারুকলার রেললাইনে অবস্থান নেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এতে আবার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে চারুকলায় রেললাইন অবরোধ করতে গেছে। সেখানে সহকারী প্রক্টরদের পাঠানো হয়েছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

এর আগে গতকাল শনিবার রাতে সংঘর্ষের পর আজ সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রথমে উপাচার্যের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে কথা শোনেন।

আরও পড়ুন
ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁরা মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে চারুকলার রেলপথে অবস্থান নেন
ছবি: প্রথম আলো

এ সময় উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তাঁরা। উপাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে বিনোদপুর এলাকায় যেতে চান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের বারান্দায় উপাচার্যসহ অন্যদের অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। শিক্ষার্থীদের একটি দল সে সময় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে¦বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বেলা একটার পর সিনেট ভবনে ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা বক্তব্য দেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে। উপাচার্যও শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ছাত্রলীগের সঙ্গে উপাচার্য তাঁর বাসভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ উপাচার্যের বাসভবনে দেয়াল টপকানোর চেষ্টা করেন। ছাত্রলীগের নেতারা তাঁদের নিয়ে সেখানেই আলোচনা করেন। পরে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা চলে যেতে থাকেন।

আরও পড়ুন

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সাংবাদিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ ছাত্রলীগ আলোচনায় বসে। তাঁরা সাত-আটটি দাবি লিখলেও পরে মতানৈক্যের কারণে তা উপাচার্যের কাছে জমা দেননি। তবে ক্যাম্পাসের বাম সংগঠনগুলো আলাদা করে দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।

এদিকে বিকেলে তখনো শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে বিক্ষোভ করছিল। সন্ধ্যার দিকে সেখানে শিক্ষার্থীদের জমায়েত বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সেখান থেকে উঠে যান। শিক্ষার্থীদের বিশাল একটি অংশ মিছিল করতে করতে চারুকলার দিকে যেতে থাকেন। রাত পৌনে আটটার দিকে তাঁরা চারুকলার রেললাইনে অবস্থান নেন। তাঁরা রেললাইনে আগুন ধরিয়ে রেললাইন অবরোধ করছেন।

আরও পড়ুন

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় বিকেলে নগরের মতিহার থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিনোদপুর এলাকার অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের কেন ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, জানতে চাইলে সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছেন তাঁরা। তবু কেন তাঁরা রাস্তায়? তাহলে বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের দাবিগুলোই মূল কথা নয়। অন্য কিছু হয়তোবা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন