যে কারণে এবার ভরা মৌসুমেও ইলিশ কম

বরিশাল পোর্টরোড পাইকারি বাজারে পিকআপ থেকে ইলিশ নামাচ্ছে শ্রমিকেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি:প্রথম আলো

ভরা মৌসুমেও বরিশালসহ উপকূলীয় নদ-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে না। অল্প বৃষ্টি ও অধিক তাপমাত্রার প্রভাবে ইলিশের সংকট চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। এমন অবস্থায় পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়া গেলে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার সরকার আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ২ হাজার ৪৫০ টন ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের ৯টি প্রতিষ্ঠান ৪৫০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে। গত সোমবার থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ইলিশ ভারতে পাঠানো শুরু হয়। বরিশাল থেকে গত ৪ দিনে ২৫ টন মাছ রপ্তানি হয়েছে। এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ১০ মার্কিন ডলার (৯৪৯ টাকা) দরে রপ্তানি হচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি করা যাবে।

আরও পড়ুন

বরিশালের পোর্ট রোড ইলিশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। সাধারণত এ সময়ে পোর্ট রোড মোকামে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার মণ ইলিশ আসত। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০০ মণের কম আসছে বলে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ জন্য দামও চড়া।

বৃহস্পতিবার মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা, ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ২ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে তা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

মূলত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির ওপর থাকলে নদ-নদীতে কোনোভাবেই ইলিশ আসবে না বলে জানালেন বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি কম হলেও ইলিশের বিচরণ কমে যায়। সে ক্ষেত্রে আগস্টজুড়ে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে ছিল। সেপ্টেম্বরে এসেও তা কমেনি। একই সঙ্গে আগস্টে বৃষ্টি একেবারেই কম হয়েছে। সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের ইলিশ উৎপাদনে।

বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান মহিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক নীরব হোসেন বলেন, ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় মাছের দাম অনেক চড়া। তাই চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি করা যাচ্ছে না। গত ৪ দিনে তাঁরা ২৫ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করেছেন। ইলিশের এমন খরা থাকলেও রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা আছে।

মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে প্রতিবছর যে ইলিশ উৎপাদন হয়, তার ৬৬ শতাংশের বেশি জোগান দেয় বরিশাল বিভাগ। গত বছর দেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ টন ইলিশ। যদিও দুই দফায় ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তখন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। এবার নিষেধাজ্ঞার অনেক আগেই রপ্তানি শুরু হলেও ইলিশের দুষ্প্রাপ্যতা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সাধারণত ইলিশ মাছ ধরা পড়া নির্ভর করে ‘জো’-এর ওপর। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময়ে যে জোয়ার হয়, সে সময়কেই জো বলা হয়। আগামী জোতে ইলিশ ধরা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, এবার সরকার ইলিশ রপ্তানির দর নির্ধারণ করে দেয়নি। ফলে রপ্তানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ পাঠানোর সুযোগ থাকছে। গতবার অল্প সময়ে রপ্তানির সময়সীমা ছিল। পাশাপাশি ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা এসে পড়ায় রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে এবার সময়সীমা বেশি। তাই আগামী জো-তে মাছের আমদানি বাড়লে সমস্যা হবে না বলে তিনি আশা করেছেন।

আরও পড়ুন