রংপুর জেলা ও মহানগর আ.লীগের নতুন কমিটি, আনন্দ শোভাযাত্রা
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির পর আওয়ামী লীগের রংপুর মহানগর ও জেলা শাখার কমিটি বিলুপ্ত করে দুই সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটির নেতৃত্বে আজ সোমবার মহানগর আওয়ামী লীগের আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে করা হয়েছে মিষ্টিমুখ। তবে নতুন জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি পালন করার খবর জানা যায়নি।
গতকাল রোববার রাতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন আহ্বায়ক কমিটির বিষয়ে জানান। একই সঙ্গে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের রংপুর মহানগর ও রংপুর জেলা শাখার বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। দুই সদস্যবিশিষ্ট মহানগর কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে দেলোয়ার হোসেনকে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন আবুল কাশেম। রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এ কে এম ছায়াদত হোসেনকে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে মাজেদ আলীকে।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফার (ডালিয়া) ভরাডুবির পর এই দুই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এদিকে কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার দিনভর নগরের কলেজ রোড, খামার মোড়, লালবাগ, মডার্ন মোড়, সাতমাথা, তাজহাট, কাছারি বাজার, বেতপট্টিসহ বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতা-কর্মীরা মিষ্টিমুখ করেছেন।
আজ সোমবার দুপুর ১২টায় মহানগর নতুন কমিটির আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে নগরে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। ওই শোভাযাত্রা নিয়ে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। শোভাযাত্রায় পুরাতন অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলও শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে নগরের কলেজ রোড থেকে বেলাল হোসেন নামের একটি আইডি থেকে ভিডিও প্রচার চালানো হয়েছে। সেই ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আজ থেকে স্বাধীন হলো। এ জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। কেউ কেউ বলেছেন, যুগান্তকারী ইতিহাস তৈরি হলো। ওই ভিডিওতে সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুর রহমান বলেছেন, ‘এত দিন যে কমিটি ছিল, তা ভাসা ভাসা কমিটি। এখন নতুন কমিটি হওয়ায় আমরা খুবই খুশি, আনন্দিত।’
আজ দুপুরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেওয়ার পর নতুন কমিটির আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি একসময় রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। পেশায় চিকিৎসক হওয়ার কারণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন রংপুর শাখার সভাপতিও ছিলাম।’ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নতুন মহানগর কমিটির দায়িত্ব দেওয়ায় মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করব।’
দুই সদস্যবিশিষ্ট নতুন মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, ‘দলের কার্যক্রম গতিশীল করতে আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।’
নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বিলুপ্ত মহানগর কমিটির সভাপতি সাফিউর রহমান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এখানে আমার মন খারাপের কিছু নেই। যাঁরা নতুন কমিটিতে এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রাণপ্রিয় দলের সাংগঠনিক কাজ করে যাব।’
রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নানা বিবেচনা থাকে। জনমত জরিপে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের ভেতরেও কিছু সমস্যা আছে। তা না হলে ভোটের এত ব্যবধান হওয়ার কথা নয়। আরেকজন প্রার্থীও আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন। আগেই জানা ছিল, এখানে এগিয়ে আছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এখানে সরকারি দল থেকে কোনো বাড়াবাড়িও হয়নি। পিছিয়ে বলে জোর করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। সেদিক থেকে এখানে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। আর দলীয় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বড় আকারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।
রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেন মোট ৯ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে জামানত টিকিয়ে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীসহ সাত প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।