পেকুয়ায় পথে পথে ব্যারিকেড, ভোটার উপস্থিতি কম

ভোট গ্রহণ শুরুর আধা ঘণ্টা পরও ফাঁকা কক্সবাজারের পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্র। এ সময় কোনো বুথে্ভই ভোটার দেখা যায়নি। আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটায়ছবি এস এম হানিফ

সকাল ৮টা ২৫ মিনিট। কেন্দ্রের ৬টি বুথে একজন ভোটারও লাইনে নেই। তবে ভেতরে গোপন কক্ষে তখন কয়েকজন ভোট দিচ্ছিলেন। এটি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রের দৃশ্য।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। শুরুর ২৫ মিনিটে ২১টি ভোট পড়েছে। শীতের সকাল। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়ার আশা করছেন তিনি। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৬৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৩৮৪ ও নারী ভোটার ১ হাজার ২৫২ জন।

একইভাবে পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, সাবেক গুলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর মেহেরনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই অবস্থা। এসব কেন্দ্রেও বাইরে ভোটারদের কোনো সারি দেখা যায়নি।

আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, পেকুয়া মডেল কেজি স্কুল, বারবাকিয়া রাস্তার মাথা, আহমদ ডিলার চৌমুহনী, উত্তর মেহেরনামার চৈরভাঙা এলাকায় হরতাল–সমর্থকেরা টায়ার জ্বালিয়ে, কাঠ পুড়িয়ে ও সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন। বারবাকিয়া রাস্তার মাথায় চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রকিব উর রাজার নেতৃত্বে পুলিশকে সড়ক থেকে গাছ সরাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া টৈটং বাজারে সড়কে গাছ ফেললে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গাছ সরিয়ে দেয়। সড়কে ব্যারিকেডের কারণে যান চলাচল একেবারেই নেই। হরতাল–সমর্থকদের পিকেটিংয়ের কারণে মানুষ কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

এএসপি রকিব উর রাজা বলেন, কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ফেলে ও কাঠ জ্বালিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছিল। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তা সরিয়ে দিয়ে যান ও জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক করেছেন। মানুষের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। ভোটাররা কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং এলাকায় সড়ক থেকে গাছ সরাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। আজ রোববার সকাল পৌনে নয়টায়
ছবি: এস এম হানিফ

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার ভোটার নুরুল আবছার (৪২) বলেন, ‘আমি ভোট দিতে বের হয়েছি। তবে সড়কে যে অরাজকতা চলছে, এ কারণে মা ও স্ত্রীকে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছি। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিভিন্ন দল টহলে থাকলেও হরতাল–সমর্থকদের নিবৃত্ত করতে পারছে না।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কাউকে কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করেন তিনি।

কক্সবাজার-১ আমনটি চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ জন। তার মধ্যে পেকুয়া উপজেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ও চকরিয়া উপজেলায় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৫২ জন ভোটার রয়েছেন। এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী।

তাঁরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হোসনে আরা, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কমরউদ্দিন আরমান ও তানভীর আহমদ সিদ্দিকী। তবে মূল লড়াই হবে জাফর আলম ও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মধ্যে, এমনটিই ধারণা ভোটারদের।