ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যায় ৪ আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি
ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় চার আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তার তমার আদালতে তাঁরা জবানবন্দি দেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া আসামিরা হলেন তারেক হোসেন (১৯), মানিক মিয়া (২০), নিজামুল হক (২০) ও আজমল ছগীর (২৬)। তাঁরা ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার শ্রমিক।
ময়মনসিংহ আদালত পুলিশের পরিদর্শক পি এস এম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, দীপু হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বিকেলে চার আসামিকে আদালতে তোলা হয়। তখন তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা আরও কয়েকজনের নাম জবানবন্দিতে বলেছেন। জবানবন্দি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে কারখানা থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়ক বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র করে ঝুলিয়ে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নিহত দীপু চন্দ্র দাস তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। এ ঘটনায় তাঁর ভাই অপু চন্দ্র দাস গত শুক্রবার অজ্ঞাতপরিচয় ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে র্যাব সাতজনকে ও পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। ২২ ডিসেম্বর তাঁদের প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত মঙ্গলবার ছয় আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হলে চার আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন (৩৮) ও কোয়ালিটি ইনচার্জ মিরাজ হোসেনকে (৪৬) আগামীকাল শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিন দিনের রিমান্ডের সময় শেষ হবে আগামীকাল দুপুর ১২টায়।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো বলা যাচ্ছে না। তবে আসামিরা নিজেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সেই কথা স্বীকার করেছেন। পরিকল্পিত মনে হলেও ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ঘটে যায়। আসামিরা নিজেদের সম্পৃক্ততা ছাড়া আরও কিছু নাম বলেছেন, যাঁরা ঘটনায় সরাসরি ছিলেন। তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া বাকি ছয়জনকে আগামীকাল তাঁরা হেফাজতে নেবেন।
এদিকে দীপু চন্দ্র দাস হত্যা মামলায় গতকাল বুধবার রাতে আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। এ নিয়ে মামলায় মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।