কেএনএফের মারধরে আহত লাইনম্যান হাসপাতালে, হুমকিতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কেএনএফের মারধরে আহত বান্দরবান-রুমা সড়কের যাত্রীবাহী বাসের লাইনম্যান লুপ্রু মারমাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেছবি: মংহাইসিং মারমা

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের একজন লাইনম্যানকে ধরে নিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা বেদম মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কেএনফের হুমকিতে আজ রোববার সকাল থেকে বান্দরবান-রুমা ও বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির নেতারা।

কেএনএফের মারধরে আহত হয়েছেন যাত্রীবাহী বাসের লাইনম্যান লুপ্রু মারমা। তিনি রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমার ছোট ভাই। উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে ১ নম্বর ঘাটে থাকেন তিনি। মারধরের পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

আরও পড়ুন

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লুপ্রু মারমা প্রথম আলোকে বলেন, আজ রোববার ভোরে রুমা ১ নম্বর ঘাট থেকে উপজেলা সদরে টিকিট কাউন্টারে যাচ্ছিলেন। পলিপাড়ায় পৌঁছানোর আগে ৮–৯ জন কেএনএফ সদস্য তাঁকে ধরে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আতঙ্কে পালানোর জন্য ধস্তাধস্তি করলে কেএনএফ সদস্যরা তাঁকে সড়ক থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গলে নিয়ে বেদম মারধর করেন। এ সময় কেএনএফ সদস্যরা তাঁর কাছে জানতে চান, যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন গাড়ি চালানো হচ্ছে। মারধর করার পর গাড়ি চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন।

রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হাসান বলেন, লুপ্রু মারমাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বুকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম আছে।

রুমা-থানচি-রোয়াংছড়ি সড়কের জিপ-বাসমালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, লুপ্রু মারমাকে তুলে নিয়ে মারধর করা ও যানবাহন চলাচলে হুমকি দেওয়ার পর থেকে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সকালে রুমা থেকে সংবাদ আসার পর জেলা শহর থেকে রুমা ও থানচির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোও লাইমিপাড়া থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় বলে চালকেরা জানান।

স্থানীয় লোকজন জানান, কেএনএফ ১৩ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার রিঝুকপাড়ায় উহ্লাসিং মারমা নামের একজনকে গুলি করে। তিনি এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রুমা উপজেলা শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশ থেকে বম জনগোষ্ঠীর কয়েকটি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন বমরা। তখন থেকে কেএনএফ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, কয়েক দিন ধরে কেএনএফকে নিয়ে রুমা উপজেলা সদরে ঝামেলা চলছে। এর জেরে আজ একজন লাইনম্যানকে মারধর করেছেন কেএনএফ সদস্যরা। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। যানবাহন চলাচল সচল করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সাল থেকে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় তৎপরতা শুরু করে। তারা দাবি করে, বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়ের গোপন আস্তানায় সমতলের জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৩৮ জঙ্গি ও অনেক কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেএনএফের হামলায় গত বছর পাঁচ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। কেএনএফ এখন রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং চাঁদাবাজি করে বলে অভিযোগ করা হয়।