শামসুজ্জামানকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া আইনের ভাষায় অপহরণ: মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁওয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি, আইনের ভাষায় এটিকে অপহরণ বলা হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সামনে রেখে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কঠিন সময় পার করছে। মানুষের অধিকার পুরোপুরি হরণ করা হয়েছে। প্রতিমুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কিছু ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে র‍্যাব তুলে নিয়ে যায়। নওগাঁয় এক নারী কর্মচারীকে তুলে নেওয়ার পর র‍্যাবের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে কীভাবে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আইনের ভাষায় এটাকে অপহরণ বলা হয়। পরে তাঁর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে দেশের মানুষের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হচ্ছে, সংবাদকর্মীদের লেখার যে স্বাধীনতা, খর্ব করা হচ্ছে। এরপর প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নামেও মামলা করা হয়েছে। এর আগেও আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে দীর্ঘকাল কারারুদ্ধ থাকার পর দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।’

বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন পুরোপুরি অনুপস্থিত মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে ক্রমাগতভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। সরকারি দলের আইনজীবীরা পুলিশের সহায়তায় নির্বাচনকে পণ্ড করে দিয়েছেন। পুলিশ নীতিবহির্ভূতভাবে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে ঢুকে আক্রমণ করেছে। ঢাকা বারেও একই ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় লক্ষ করে দেখেছি, আওয়ামী লীগ সরকার আইনজীবী সমিতিকে দখল করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করার পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রকেও ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না।’

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগ নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন আগামীর যে নির্বাচন (সংসদ নির্বাচন), সেই নির্বাচনের জন্য তারা নতুন করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো তামাশা শুরু করেছে। আমরা কোনো তামাশার নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। দেশের জনগণ যেখানে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন, তাঁর মতামত প্রকাশ করতে পারবেন—আমরা এমন একটা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে সেই নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ক্ষান্ত হয়নি; তারা দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকেও নড়বড়ে করে দিয়েছে। অথচ তারা বলে বেড়ায়, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। দেশ এমন রোল মডেল হয়েছে, যেখানে ব্যাংক লোপাট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে চুরি হচ্ছে, রিজার্ভ ফান্ড পর্যন্ত হ্যাক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর দিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই।

আরও পড়ুন

বিএনপির দাওয়াতে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের যোগদানসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা একটা দলের সৌজন্যমূলক ইফতারের আয়োজন ছিল। সেখানে রাজনৈতিক মতবিনিময় হয়নি। আমরা সেখানে তাঁদের দাওয়াত করেছিলাম, তাঁরা এসেছিলেন।’

মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি নুর করিম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, আল মামুন, পৌর বিএনপির সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদপ্রার্থী আবদুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।