গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনের ফটকে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন নাদিরা আক্তার। তাঁর পাশে বসে আছেন নাদিরার ভাই আবদুল হালিম। তিনি নাদিরাকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু নাদিরার আহাজারি যেন থামছে না। নাদিরার ৮ বছরের মেয়ে তামান্না আক্তারের লাশ গ্রহণের অপেক্ষায় বসে আছেন তাঁরা।
মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে নাদিরা ও তাঁর স্বামী তরিকুল ইসলাম গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন পূর্ব এনায়েতপুর (সবুজ কানন) এলাকায় থাকতেন। গতকাল শনিবার তরিকুল ইসলাম বালিশ চাপা দিয়ে তামান্নাকে হত্যার পর নিজে ব্লেড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তরিকুল এখন পুলিশি হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় গতকাল রাতে নাদিরা বাদী হয়ে তরিকুলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।
তরিকুলের স্ত্রী নাদিরা আক্তার বলেন, পরিবারে অভাব আছে; তবে তার জন্য মেয়েকে মেরে ফেলার বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মানুষ তো ভিক্ষা কইরা খায়, আমরা তো আর ভিক্ষা কইরা খাই না। তাইলে আমাগো অভাব কিসের, যেই অভাবের লাইগা নিজের সন্তানরে মাইরা ফালাইতো অইবো? আমরা দুইজনে চাকরি কইরা ১৬ হাজার টাকার উপরে বেতন পাই। দুই হাজার টাকা ঘরভাড়া। বাকি টাকা দিয়া খাওয়া আর অন্য সব খরচ করে ভালোই তো চলতে ছিলাম।’ স্বামীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার মাইয়ারে মারলি কেন? ওর মাথা খারাপ ছিল। নইলে কি নিজের মাইয়ারে কেউ মাইরা ফালায়?’
তরিকুল ইসলামের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। মাসখানেক আগেই তরিকুল পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধানে দিনাজপুর থেকে গাজীপুরে আসেন। তাঁদের সাড়ে তিন বছরের আরেক সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছেন। গাজীপুর এসেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পোশাক কারখানায় চাকরি পেয়েছিলেন।
নিহত তামান্নার মামা আবদুল হালিম বলেন, ‘ওদের তেমন বড় কোনো অভাব ছিল না। মাত্র এক মাস হয়েছে দিনাজপুর থেকে গাজীপুরে এসেছে। দুইজনেই চাকরি পেয়েছে। নাদিরার বেতন ৮ হাজার ১০০ টাকা। বোন-জামাইয়ের বেতন ৮ হাজার ৩০০ টাকা। এটা দিয়ে ভালোই চলার কথা। কমবেশি অভাব তো সবার পরিবারেই থাকে। কিন্তু তাই বলে কেউ তাঁর সন্তানকে মেরে ফেলবে, এটা তো হতে পারে না। বোন-জামাই অকারণেই অনেক সময় রেগে যেতেন। তাঁর (তরিকুল) মাথা খারাপ ছিল।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) কাশিমপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদ আল রেজা বলেন, নিহত শিশুর বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তরিকুল ব্লেড গিলে খাওয়ায় কথা বলতে পারছেন না। তবে হাত দিয়ে লিখে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।