ভাইরাল হতে আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ: হিরো আলম

হিরো আলম।
ছবি: সংগৃহীত

‘সবাই দেখতেছে, হিরো আলমের বিরুদ্ধে কিছু করলে ভাইরাল হওয়া যাচ্ছে। এভাবে সেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ভাইরাল হওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আমার সম্মানহানি করা এবং আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছে।’ গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বাদী সম্পর্কে এসব কথা বলেন হিরো আলম।

গতকাল রোববার রাত ১১টায় শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় হিরো আলমের সঙ্গে কথা হয়। ওই সময় তিনি মাওনা পুলিশ ফাঁড়িতে যাচ্ছিলেন।

৫ আগস্ট রুবেল মুন্সি নামে এক ব্যক্তি হিরো আলম ও তাঁর অপর দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগ দেন। অভিযোগটি তদন্ত করছে শ্রীপুর থানার পুলিশ।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হিরো আলমের মালিকানাধীন অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন রুবেল মুন্সি। ২০২১ সালে তাঁর কাছ থেকে হিরো আলম ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ৭ মাসের বেতনের ৭০ হাজার টাকা হিরো আলমের কাছে জমা রাখেন রুবেল। পরে মোট পাওনা ৯০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে হিরো আলম ‘দিই, দিচ্ছি’ বলে তাঁর সঙ্গে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে পাঁচ মাস আগে চাকরি ছেড়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে এসে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন রুবেল।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে হিরো আলম অভিযুক্ত দুজনকে সঙ্গে নিয়ে রুবেল মুন্সির বর্তমান কর্মস্থলের সামনে আসেন। এ সময় মুঠোফোনে কল করে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে রুবেলকে অফিস থেকে বের হতে বলেন হিরো আলম। রুবেল অফিস থেকে বের হলে হিরো আলম তাঁকে প্রাইভেট কারে তুলে মেডিকেল মোড়ে নিয়ে যান। সেখানে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সহযোগিতায় তাঁর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, জি-মেইল ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নিয়ে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিলে তাঁকে মারধরসহ জানমালের ক্ষতি করার হুমকি দেন হিরো আলম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে টাকা পাইলে এতদিন বলেনি কেন? আমার কাছে সাক্ষী–প্রমাণ আছে যে সে কোনো টাকাপয়সা পায় না। সে আমার ল্যাপটপ নিয়ে এসেছে। আমার পাঁচটি চ্যানেলের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এতকিছু করার পর উল্টো সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে হ্যারেজমেন্ট করছে, ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে।’

হিরো আলম বলেন, ৪ আগস্ট রাতে শ্রীপুর এসে রুবেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং তাঁর অবস্থান জানতে চান। রুবেল প্রথমে তাঁর অবস্থান জানাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে তিনি তাঁর অবস্থান জানান। পরে মাওনা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ঘটনা খুলে বলেন হিরো আলম। সেখান থেকে চার পুলিশ সদস্যকে নিয়ে তিনি রুবেলের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় তাঁকে একটি চ্যানেল বুঝিয়ে দেন এবং বাকি চ্যানেলগুলো শুক্রবার (৫ আগস্ট) বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন রুবেল।

আরও পড়ুন

রুবেল মুন্সি করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘আমি ধরে আনিনি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিয়েছি। ধরে আনার অভিযোগ প্রমাণিত হলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি এসব বিষয়ে থানায় কথা বলতে শ্রীপুরে এসেছি।’

এদিকে ভাইরাল হওয়ার জন্য অভিযোগ দেননি উল্লেখ করে রুবেল মুন্সি আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে, এর বিচার পেতে অভিযোগ দিয়েছি। উনি সবাইকে এক পাল্লায় মাপতে চান। আমার ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছা নেই। চার আগস্ট রাতে আমার কাছ থেকে জোর করে ল্যাপটপ ও বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ফেরত নেন হিরো আলম। এমনকি গত রোববার রাত থেকে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে। এটিও তিনি করিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবু জাফর মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিরো আলম আমাদের পুলিশ ফাঁড়িতে এসে অভিযোগ করেন, এক ব্যক্তি তাঁর ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে এসেছে। এসব উদ্ধারে আমাদের সহযোগিতা চান। পরে ফাঁড়ির এসআই রফিককে ফোর্স নিয়ে গিয়ে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে বলি। এরপর এসআই রফিক আমাকে জানান, ল্যাপটপ নিয়ে আসা ব্যক্তি হিরো আলমের কাছে ৭০ হাজার টাকা পান। ওই রাতে সিদ্ধান্ত হয়, হিরো আলম তিন দিনের মধ্যে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ওই জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন। পরদিন শুনলাম ওই ব্যক্তি (রুবেল) হিরো আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তিনি তাঁকে নিয়ে আটকে রেখেছেন।’

অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।