‘শীতে শরীলে কাঁপনি ধরে, কম্বলডা পাইয়্যা উপকারই অইলো’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্ত ও অসহায় ১০০ জনকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামেছবি: আব্দুল মোমিন

প্রায় চার বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন রিকশাচালক তারা মিয়া (৬৫)। পরে চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও স্বাভাবিক চলাচল করতে পারেন না। বৃদ্ধ স্ত্রী খেতেখামারে লতাপাতা ও শাকসবজি তুলে তা বাড়িতে বাড়িতে বিক্রির টাকায় কোনোমতে চলে সংসার। স্ত্রীকে নিয়ে লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে এসেছিলেন তিনি।

কম্বল পেয়ে তারা মিয়া বললেন, ‘অসুস্থ মানুষ কামকাইজ করতে পারি না। চার বছর ধেইরা ঘরে শুইয়্যা-বইস্যা দিন কাটে। যে শীত পড়ছে, শীতে শরীলে কাঁপনি ধরে, কম্বলডা পাইয়্যা উপকারই অইলো। আল্লাহ যেন তোমাগো আরও দিবার দ্যায়।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের একটি মাঠে আজ শুক্রবার বিকেলে ছয়টি গ্রামে ১০০ অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তারা মিয়া একটি কম্বল পেয়ে এমন প্রতিক্রিয়া জানান।

এর আগে বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরা সদর উপজেলার দীঘি ইউনিয়নের ছুটি ভাটবাউর, সারেংপাড়া, দীঘি, দীঘি দক্ষিণ পাড়া, দীঘি মাঝিপাড়া ও কয়রা গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেন। পরে ১০০ জনের হাতে কম্বল বিতরণের স্লিপ তুলে দেওয়া হয়। সেই স্লিপ নিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শীতার্ত ও বয়স্ক নারী-পুরুষেরা পারপুগী দীঘি দক্ষিণ পাড়া একটি মাঠে কম্বল নিতে উপস্থিত হন। যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁদের বাড়িতে কম্বল পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন ছুটি ভাটবাউর গ্রামের বিধবা জমিলা বেগম (৭৫)। কম্বল পেয়ে খুশি হয়ে তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে স্বামী মারা গ্যাছে। এই শীতে কম্বল দেওন কেউ নাই। দিনে যেমন-তেমন শীতে রাইতে কী যে কষ্ট! তোমরা কম্বলখানা দিয়্যা খুব উপকার করল্যা। এহন শান্তিতে ঘুমাবা পারমু।’

পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ায় লাঠিতে ভর ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না কয়রা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৫৫)। কম্বল পেয়ে আবেগে আপ্লুত সিরাজুল বলেন, ‘আমাগো কথা যে তোমরা চিন্তা করছ, এই কম্বলডা দিলা, কয়জনে তা দেয়। শীতের জোটে (দাপটে) শরীর কালাইয়্যা নেয়। কম্বলডা কাজে দিব।’

৯০ বছর ছুঁই ছুঁই দীঘি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বদর উদ্দিন লাঠিতে ভর করে আসেন কম্বল নিতে। তাঁরা ছেলেরা সবাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। বাড়ির উঠানে শাকসবজি লাগিয়ে তা বিক্রি করে কিছু টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে চলে তাঁর সংসার। কম্বল পেয়ে বদর উদ্দিন বলেন, ‘যে কুয়াশা পড়ে, খুব ঠান্ডা। কম্বল দিয়্যা তোমরা উপকার করল্যা। এহন শীতে শান্তিতে একটু ঘুমাইবার পারমু।’

ছয়টি গ্রামের ১০০ জন অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, প্রথম আলোর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল মোমিন, দীঘি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা, প্রথম আলো মানিকগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মো. চান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক জিসানুর রহমান প্রমুখ।

প্রথম আলো ট্রাস্টের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল অসহায় শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬—এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।

আরও পড়ুন