কয়রায় নিয়োগ কমিটির সদস্যকে পিটিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

মারধরের শিকার অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। গত শুক্রবার রাতে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিয়োগ কমিটির সদস্যকে মারধর করে নিয়োগের কাগজে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে ভুক্তভোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন

এ ঘটনায় গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী ও মামলার ৪ নম্বর আসামি কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব-৬-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে কয়রা থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওই মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। মারধরের শিকার অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিতে গত শুক্রবার কয়রায় এসেছিলেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
ছবি: সংগৃহীত

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম এস দোহা বলেন, গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। মামলার অন্যতম আসামি মহারাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগবিধি অনুযায়ী ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম। লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। চাপ উপেক্ষা করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে অনড় থাকেন অধ্যাপক। এতে ক্ষিপ্ত হন সভাপতি। পরে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল আহসানের গাড়িতে করে ফেরার পথে মাদ্রাসার সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বাড়ির সামনে পৌঁছালে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁদের গতিরোধ করেন। গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর মুঠোফোন, মানিব্যাগ, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ আনুমানিক ২০ হাজার টাকা ও তাঁর হাতে থাকা ঘড়ি ছিনিয়ে নেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন কিলঘুষি মারতে মারতে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। রাজি না হলে একটি ঘরে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পর জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ সময় তাঁদের মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে পান নজরুল ইসলাম।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাত ও মাথায় এখনো প্রচন্ড ব্যথা আছে।’

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শেষে ওই অধ্যাপক তাঁর বাড়িতে নাশতা করতে এসেছিলেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাদ্রাসাটির সভাপতি হওয়ার পর একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারেনি। এমনকি অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও ব্যবহার করে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। এটিও ওই ষড়যন্ত্রের অংশ।’