মধুখালীতে ইউএনও ওপর হামলার ঘটনায় দুটি মামলা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জন গ্রেপ্তার

হাতকড়া
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর এলাকাবাসীর হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও আশিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়িচালক সুমন শেখ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া আজ শুক্রবার সকালে বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রবীর কুমার সরকার।

আরও পড়ুন

দুই মামলার এক নম্বর আসামি ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আসাদুজ্জামানসহ (৫০) চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেল থেকে রাতের মধ্যে অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার চারজনকে আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন ডুমাইন ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম মৃধা (১৯), মো. প্রিন্স মোল্লা (৩২) ও কবিরুল বিশ্বাস (৪০)।

এদিকে হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, হামলার ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. লিটন আলীকে নিয়ে আজ এক সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, দুটি মামলায় মোট ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন নারী। এ ছাড়া ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গাড়িচালকের সুমন শেখের করা মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর এবং গুরুতর জখম করে চুরি ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে এসআই প্রবীর কুমার সরকারের দায়ের করা মামলাতেও একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাজাহান বলেন, গ্রেপ্তার চার আসামিকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আজ দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। তবে আদালত রিমান্ডের শুনানি আগামী রোববার ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

এলাকার কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডুমাইন ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প করতে একটি জায়গা দেখা হয়। জায়গাটি বর্তমানে বিএস রেকর্ডে খাস হলেও আরএস রেকর্ডে ব্যক্তিমালিকানাধীন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের বিরোধ চলছিল। গতকাল দুপুরে এলাকার নারীরা ওই জমির মালিকানা দাবি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছিলেন। এ খবর পেয়ে ইউএনও আনসার সদস্যদের নিয়ে সেখানে যান। আনসার সদস্যরা নারীদের কাছ থেকে মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় নারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। আনসার সদস্যরা রাইফেলের বাঁট দিয়ে কয়েক নারীকে আঘাত করেন। একপর্যায়ে এক নারী আহত হন। পরে অন্য নারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে গাছের ডাল ভেঙে আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালান। এ সময় স্থানীয় মাইকেও ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ সময় হামলায় ইউএনও, ৪ নারীসহ ১০ জন আহত হন। ওই সময় আনসার সদস্যরা শটগানের তিন থেকে চারটি গুলি ছোড়েন। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে মধুখালী থানার পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এদিকে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আজ সকাল নয়টার দিকে মধুখালী রেলগেট এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মধুখালী উপজেলা শাখা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিবার।