ফরিদপুরের ‘দল পাল্টানো’ নূরুদ্দীন কোন দলের, আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপির

ফরিদপুরের সালথায় সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ ত্যাগের ঘোষণা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নূরুদ্দিন মাতুব্বর। গত বুধবার বিকেলে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের মাদ্রাসা গট্টি মোড় এলাকার একটি দোকানেছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার নূরুদ্দীন মাতুব্বর কোন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপির—এ নিয়ে তিনি নিজেই ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২২ জুন সালথা উপজেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশকে কেন্দ্র করে নূরুদ্দীনের নামে বিশাল মোটর শোভাযাত্রা বের হয়। তখন তাঁকে ‘বারবার কারাবরণকারী বিএনপির নির্যাতিত নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর ২৪ আগস্ট পাশের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়ায় বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের কবরে ‘গট্টি ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে’ লেখা পুষ্পস্তবক অর্পণের সময়ও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

গত বুধবার বিকেলে গট্টি ইউনিয়নের মাদ্রাসা গট্টি মোড় এলাকায় একটি দোকানে সংবাদ সম্মেলন করেন নূরুদ্দীন মাতুব্বর (৫৫)। তিনি বলেন, ‘আমার আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে নাম নেই। আর যদি আমার অজান্তে কোনো কমিটিতে নাম থাকে, আজ এ সংবাদ সম্মেলন থেকে তা আমি প্রত্যাহার করলাম।’

নূরুদ্দীন মাতুব্বর সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা প্রয়াত হাশেম মাতুব্বর। নূরুদ্দীন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন

তবে সংবাদ সম্মেলনে নূরুদ্দীন দাবি করেন, ‘আমি গট্টি ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলাম। কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির কমিটিতে ছিলাম। এরপর আওয়ামী লীগের চাপ, হামলা-মামলার কারণে আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। আমাকে চাপে ফেলতে ও তাদের (আওয়ামী লীগের) গ্রাম্য দলে মিশতে বাধ্য করেছে। তবু আমি কখনো আওয়ামী লীগের হইনি।’ তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপির প্রথম মহাসচিব ওবায়দুর রহমানের একজন বিশ্বস্ত কর্মী ছিলাম। তিনি আমার বাড়িতে অনেকবার এসেছেন। মায়ের হাতের পিঠাও খেয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে নূরুদ্দীন মাতুব্বর বলেন, ‘একটি মহল আমাকে আওয়ামী লীগের নেতা বানিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়াচ্ছে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই এসব করা হচ্ছে। আমি এর নিন্দা জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিএনপির কর্মী নুর আলম, ইউনুস মোল্লা, সাবান খান, ইসহাক মাতুব্বর, সায়েদ মীর, আফতার খান, শুকুর খান, পাঞ্জু মাতুব্বর প্রমুখ।

স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নূরুদ্দীন মাতুব্বরের নামে থানায় হামলা, বিস্ফোরকসহ তিনটি মামলা হয়। গত ২৯ মার্চ এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় চার মাস জেল খাটার পর গত ৩০ জুলাই জামিনে মুক্ত হন তিনি।

এদিকে সালথা উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নূরুদ্দীন মাতুব্বর অনেক আগে বিএনপি করলেও আওয়ামী লীগের সময়কালে তিনি বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগে তাঁর পদও আছে।

অন্যদিকে ‘কখনো আওয়ামী লীগ করেননি’ বলে নূরুদ্দীন যে দাবি করেছেন, তা নাকচ করে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী। তিনি বলেন, নূরুদ্দীন মাতুব্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এবং তাঁর ভাই মুনছুর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বুধবার বিকেলের সংবাদ সম্মেলনের আগে তিনি কিংবা তাঁর ভাই দলীয়ভাবে লিখিত পদত্যাগ করেননি।