‘সুরমা নদীর উৎসমুখ পানিপ্রবাহের উপযোগী নয়’

সিলেটে ‘নদীর অধিকার ও সিলেটের নদনদীর অবস্থা: প্রেক্ষিত সোনাই নদী’ শীর্ষক নাগরিক সভায় বক্তারা। মঙ্গলবার নগরের একটি অভিজাত রেস্তোঁরার সম্মেলনকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

কেউ কেউ নদীকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা এখনো সৃষ্টি হয়নি। তবে যাঁরা নদী দখল করছেন, তাঁরা কিন্তু সচেতনভাবেই করছেন। বিশেষ করে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ও ইজারাদার, যাঁরা নদী দখল করে ভবন বানাচ্ছেন, তাঁরা জেনেবুঝেই করছেন। যাঁরা এসব বোঝেন না বা এ ব্যাপারে অসচেতন, তাঁরা কিন্তু নদীর খুব বেশি ক্ষতি করেন না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের জেল রোড এলাকার একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় আয়োজিত নাগরিক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এসব কথা বলেন। ‘নদীর অধিকার ও সিলেটের নদ–নদীর অবস্থা: পরিপ্রেক্ষিত সোনাই নদী’ শীর্ষক সভা যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘সুরমা নদীর বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। সেগুলো আমরা দেখব। তবে সুরমা নদীর তীরে খুব বেশি ইন্ডাস্ট্রি নেই। তাই খুব একটা দূষণ হচ্ছে না। সুরমাতে যে বর্জ্য যায়, সেটি প্রতিদিনের হাটবাজার বা গৃহস্থালির বর্জ্য। এটা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। সুরমা নদীর উৎসমুখ পানিপ্রবাহের উপযোগী নয়। তাই এ নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা প্রয়োজন।’

বাপা সিলেটের সভাপতি জামিল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক শরীফ জামিল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম ও সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম। বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম চৌধুরী কিমের সঞ্চালনায় নাগরিক সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার শিক্ষা, তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্যসচিব এস এম আরাফাত।

আরও পড়ুন

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ‘আমাদের দেশে নদীর অধিকার হরণ করা হচ্ছে। অবাধ প্রবাহে বাধা, নদীর নিজস্ব ভূমিরূপে হস্তক্ষেপ করাসহ নানা কাজ করে নদীর অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করার পরও মানুষ নদীর ওপর অত্যাচার করছে। আইনানুযায়ী এসবের জন্য ফৌজদারি মামলাও করা যায়। কিন্তু মামলাও আমলে নেওয়া হয় না। কারণ, বিভিন্ন জায়গায় যাঁরা নদী শাসন করছেন, তাঁরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা বড় বড় শিল্পপতি।’

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম; পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট সিলেটের সভাপতি মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী; সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা রহমান, সহকারী অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক; আইনজীবী গোলাম সোবহান চৌধুরী; উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হোসেন; তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে; সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদি; আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন; পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র; হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা; আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী; সাংবাদিক পীর জুবায়ের; সংস্কৃতিকর্মী নিশাত সাদিয়া প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘নদী রক্ষায় আইনগতভাবে এখন বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক সময় বিপত্তি ঘটে। আমরা নদীর পাড়ের দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হই। আইন অমান্য করার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদ–নদীকে সুরক্ষিত করা সম্ভব।’

সভায় অন্যান্যের মধ্যে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির, ফকির মেলা ফাউন্ডেশনের ফকির জাকির হোসেন, উন্নয়নকর্মী হাসান এ চৌধুরী, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের সদস্য মুজাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।