ময়মনসিংহের মালাইকারী মিষ্টি এখনো সেরা

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি মালাইকারীছবি: প্রথম আলো

দিনে দিনে ময়মনসিংহের মিষ্টির বাজারে বড় পরিবর্তন এসেছে। যোগ হয়েছে বাহারি নামের মিষ্টি। কিন্তু নতুন নতুন নাম আর স্বাদের ভিড়ে একটুও কদর কমেনি ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মালাইকারী মিষ্টির। সাধারণ মিষ্টির ওপর দুধের ক্ষীর লাগিয়ে তৈরি করা হয় মালাইকারী।

মালাইকারী মিষ্টির প্রচলন ময়মনসিংহেই, প্রায় ১০০ বছর আগে। এখন ময়মনসিংহ নগরের নামকরা সব দোকানেই তৈরি হয় মালাইকারী।

ময়মনসিংহের কবি আহমদ জামাল জাফরী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মালাইকারী মিষ্টি। এটি স্বাদে অতুলনীয়। দিনে দিনে মালাইকারী মিষ্টি ময়মনসিংহের অন্যতম ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। অনেক জাতের মিষ্টির ভিড়ে মালাইকারীর কদর এখনো অনেক বেশি।’

আরও পড়ুন

মালাইকারী মিষ্টি তৈরির পেছনে একটি গল্প আছে। ময়মনসিংহের প্রথম মিষ্টির দোকান নগরের স্বদেশি বাজারের ‘জানকী নাগ সুইটস মিটে’ প্রথম মালাইকারী তৈরি হয়। দোকানটির পঞ্চম প্রজন্মের স্বত্বাধিকারী তপন নাগ জানান সে গল্প। তিনি বলেন, মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর সময়ের কথা। জমিদারবাড়ির একটি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য মিষ্টির অর্ডার আসে জানকী নাগে। বলা হয় বিশেষ স্বাদের ব্যতিক্রমী কোনো মিষ্টি যেন তৈরি করে দেওয়া হয়। শশীকান্তের এমন ইচ্ছা পূরণের জন্য জানকী নাগের তৎকালীন স্বত্বাধিকারী বদ্রী নারায়ণ নাগ মালাইকারী মিষ্টি তৈরি করে জমিদারবাড়িতে পাঠান। এর পর থেকে নিয়মিতভাবে এই মিষ্টি তৈরি করতে থাকেন তাঁরা। সাধারণ মানুষও খুব আগ্রহ নিয়ে এই মিষ্টি কিনতেন। দিনে দিনে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

দুধের ছানা দিয়ে গোলাকার মিষ্টি তৈরির পর সেটি মাঝ বরাবর কেটে দুই ভাগ করা হয়। পরে প্রতিটি ভাগের ‘বুক’ বরাবর দুধের তৈরি ক্ষীর লাগানো হয়। এভাবেই তৈরি হয় ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি মালাইকারী। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডার পর মালাইকারীও ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন

ময়মনসিংহের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান ‘কৃষ্ণা কেবিন’। এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী রঞ্জিত বসাক বলেন, ১৯৫৮ সালে কৃষ্ণা কেবিন প্রতিষ্ঠা হয়। শুরু থেকেই তাঁরা মালাইকারী তৈরি করেন। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি তাঁদের মালাইকারী ময়মনসিংহ ও পাশের জেলা নেত্রকোনার মিষ্টি বিক্রেতারা পাইকারী দরে কিনে নেন। ময়মনসিংহে মালাইকারীর দাম প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। প্রতি কেজিতে ১৫টির মতো মালাইকারী ধরে।