খুলনায় চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, রোগীদের দুর্ভোগ

দূরদূরান্ত থেকে বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আজ বুধবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শেখ নিশাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনায় ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। আজ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে ওই কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। কর্মবিরতির আওতায় খুলনা জেলার সব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান (সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি) থাকবে। তবে হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ খোলা আছে।

এদিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। দূরদূরান্ত থেকে বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আজ সকাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

তিন মাসের ছেলেকে নিয়ে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকা থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলেন মো. আবুল কালাম। তবে টিকিট কাউন্টারে কোনো টিকিট না পেয়ে তিনি হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবুল কালাম বলেন, ‘বাচ্চাটার কিছু সমস্যা আছে। এর আগেও এখানে চিকিৎসা করিয়েছি। তবে আজ তো কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কথা জানতাম না। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে এত দূর থেকে এসে এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’

আরও পড়ুন

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলেন রওশন আরা। টিকিট না পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। রওশন বলেন, হাসপাতালে আসার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠে তিনি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। তাড়াহুড়োর কারণে সকালে নাশতা খাওয়ারও সময় পাননি। তবে হাসপাতালে এসে জানতে পারলেন, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। তাই কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ফারজানা বলেন, টিকিট দেওয়া হচ্ছে না, ব্যাপারটি এমন নয়। তবে চিকিৎসক তো নেই, তাহলে রোগীরা কার কাছে চিকিৎসা নেবেন। টিকিট হাতে পেয়ে তাঁরা চেম্বারে গিয়ে ঝামেলা করতে পারেন, এ কারণে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না।

চিকিৎসক না থাকায় কাউন্টারে মিলছে না টিকিট
ছবি: প্রথম আলো

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরের শেখপাড়ায় অবস্থিত হক নার্সিং হোমে অস্ত্রোপচার চলা অবস্থায় চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন রোগীর স্বজনেরা। এ সময় অপারেশন থিয়েটারও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা বিএমএর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে ওই ঘটনার বিচার দাবি করে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন চিকিৎসকেরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা বিএমএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে খুলনা বিএমএর সভাপতি চিকিৎসক শেখ বাহারুল আলম বলেন, ঘটনার পর থেকে চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তিতে আছেন। বহুবার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই বারবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কখনোই এ আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকেরা রাষ্ট্রের সীমিত ব্যবস্থাপনায় বহুসংখ্যক জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজেকে অরক্ষিত ও অনিরাপদ রেখে চিকিৎসকেরা আর কর্মস্থলে যেতে চান না। চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহর মতো একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও পরোপকারী সহকারী অধ্যাপক এবং একটি বিভাগের প্রধানের ওপর এ ধরনের অত্যাচারের দৃশ্য দেখে চিকিৎসক সমাজ ব্যাপকভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। এ জন্য তাঁরা ওই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন।