‘আমার শিশুসন্তান কী অপরাধ করেছিল?’

চার বছরের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মায়ের আহাজারি। প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বুধবার দুপুরে পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় স্কুলপড়ুয়া বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে চার বছর বয়সের ছোট ভাইকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় স্বজনদের আহাজারি থামছেই না। সন্তানের মৃত্যুর খবরে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন বাবা। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ওই শিশুর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে মোবাইলে শুনেছি, সে প্রতিদিনই বাড়ির পাশে খেলতে যেত। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসত। কিন্তু সেদিন আর ফেরেনি।’ আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার শিশুসন্তান কী অপরাধ করেছিল? ওরা আমার বুক খালি করে দিল। আমি তাদের বিচার চাই।’

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে অভিযোগ করে ওই শিশুর বাবা বলেন, এখনো মূল আসামিরা ধরা পড়েননি। আসামিরা তাঁদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

আরও পড়ুন

১৩ মে সন্ধ্যায় পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের ধানখেত থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের বাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নে। শিশুটি ৮ মে বিকেলে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর আর বাড়িতে ফেরেনি। এ ঘটনায় ৯ মে শিশুটির মা (৩৫) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে শিশুটিকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১০ মে অপহরণের অভিযোগ করে থানায় মামলা করেন তিনি। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়।

ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে সুনসান নীরবতা। বারান্দায় মা-বাবার সঙ্গে বসে প্রতিবেশীরা কথা বলছেন। দূরের আত্মীয়স্বজন শিশুটির পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা বললেন, ‘হামার এক ব্যাটা (ছেলে) এক বেটি (মেয়ে)। বড় বেটি এইটে পড়ে। তাক হামরা নেকাপড়া করি বিয়ে দিনো হয়। আসামি সাকিব নেশা করে। সে হামার বেটিক বিয়া করব্যার চাচিল। দ্যাই নাই। তামরা হামার শিশু বাচ্চাক মারি ফ্যালাচে। যামরা হামার বাচ্চা ছোলোক কারি নিচে তামাক ফাঁসি দ্যান।’

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের বালুখোলা এলাকার সাকিব হাসান (১৯) ও শরিফুল ইসলাম (২০) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে সাকিব হাসান হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, নিহত শিশুর স্কুলপড়ুয়া বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তিনি। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতেন তিনি। একপর্যায়ে বিয়েরও প্রস্তাব দেন। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ স্কুলছাত্রীর পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর ওই ছাত্রীর ভাইকে হত্যা করেন।

দুই আসামি ছাড়াও সন্দেহভাজন আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়ে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের বালুখোলা এলাকার খোরশেদ আলম (২১), আসাদুজ্জামান (১৯), ছকিনা বেগম (৬০), ববিতা বেগম (৪৫), মনিরা বেগমসহ (২২) সাতজন।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিশুর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে।