গাজীপুরের চন্দ্রায় থেমে থেমে চলছে যানবাহন

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়। শুক্রবার সকাল ১০টার চিত্র।ছবি: প্রথম আলো

ঈদযাত্রায় যানজট এড়াতে আজ শুক্রবার ফজরের নামজের পর পরই গাজীপুরের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রকৌশলী আবদুর রশিদ। কালিয়াকৈর উপজেলার বোর্ডবাজার থেকে সফিপুর বাজারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পৌঁছাতেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখতে পান তিনি। পরে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেন। রশিদ বলেন, ‘প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সকালে চন্দ্রা এলাকায় পৌঁছে গেলেও যানজট তখনো শেষ হয়নি। তাই চন্দ্রায় বসে না থেকে আরও দুই কিলোমিটার হেঁটে কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোরা এলাকায় পৌঁছাই। সেখান থেকে একটি বাসে ওঠে উল্লাপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি।’

তবে এতো সহজে যানজট আবদুর রশিদের পিছু ছাড়েনি। সকাল ১০টার দিকে এই প্রতিবেদকে মুঠোফোনে রশিদ বলেন, ‘এখন টাঙ্গাইলের বাইপাসে জ্যামে আটকে আছি। থেমে থেমে গাড়ি চলছে। শুনেছি সেখানে যানবাহন বিকল হয়েছে; যার কারণে কিছুটা জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে।’

আজ ভোর থেকে ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের চাপ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। গতকাল বিকেল থেকেই সড়কটিতে থেমে থেমে যানজটের দেখা মিলছে। এর মধ্যে বৃষ্টি এলে ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করে৷

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল অনেক শিল্পকারখানার ছুটি হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে এসব কর্মজীবীরা বাসা থেকে বের হয়নি। তাঁদের অনেকেই আজ শেষরাত ও ভোর থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। গাজীপুরের অধিকাংশ শিল্পকারখানা আজ ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিকেলে মানুষের চাপ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর উড়ালসড়ক থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত থেমে থেমে চলছে যানবাহন। কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে কবিরপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে কালিয়াকৈরে খাড়াজোরা পর্যন্ত কোথাও দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। যাত্রীরা যে যেভাবে পারছেন, বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ বাসে, কেউ ট্রাক, পিকআপ বা ফিরতি পশুবাহী ট্রাকে বাড়ি ফিরছেন। তবে পিক-আপের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে বগুড়া, নওগাঁ, গাইবান্ধা, নাটোরের লোকজনকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহনগুলোতে উঠতে দেখা গেছে৷ স্বাভাবিক সময়ের থেকে ভাড়া বেশি হাওয়ায় শিল্পকারখানা শ্রমিকেরা কম ভাড়ার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন ব্যবহার করে বাড়ি ফিরছেন।

যাত্রীদের মধ্যে একই প্রবণতা দেখা গেছে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ডবাজার, ভোগরা বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, সালনা বাজার এলাকায়। এসব স্থানে সকাল থেকেই ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে কবিরপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে কালিয়াকৈরে খাড়াজোরা পর্যন্ত কোথাও দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। যাত্রীরা যে যেভাবে পারছেন, বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ বাসে, কেউ ট্রাক, পিকআপ বা ফিরতি পশুবাহী ট্রাকে বাড়ি ফিরছেন। তবে পিক-আপের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

নওগাঁর পত্নীতলা এলাকার অমিত হাসান বলে, ‘আমি একাদশ শ্রেণির ছাত্র। কয়েক মাস পর পরীক্ষা, এ জন্য আগেভাগে বাড়ি যাইনি। আজ সকালে বের হয়ে দেখি রাস্তায় মানুষের অনেক চাপ৷ অন্য সময়ের থেকে দুইগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো। এখন গাড়ির মালিকদের সঙ্গে ভাড়ার বিষয়ে দর-কষাকষির কোনো সুযোগই নেই। যার ফলে ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছে সবাই, এগুলো দেখার কেউ নেই।’

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, মহাসড়কটির কোথাও দীর্ঘ যানজট নেই। বৃষ্টির কারণে মাঝে কিছুটা ধীরগতি হয়। গাজীপুরসহ আশপাশের সব শিল্পকারখানা আজ ছুটি হওয়ার কথা রয়েছে। কারখানা ছুটি হলে বিকেলে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, মহাসড়কে যানজট নিরসনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রেকার মজুত রাখা হয়েছে যাতে কোনো যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। এ ছাড়া মোটরসাইকেলে পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।