সম্পূরক অভিযোগপত্রে ‘নিরীহ-নির্দোষ’ নেতা–কর্মীদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ আওয়ামী লীগের

বরকত-রুবেলের অর্থ পাচার মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের বিরুদ্ধে করা অর্থ পাচার আইনের মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে নতুন করে ৩৭ জনকে আসামি করার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নয়জন নেতা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জমা দেওয়া ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলে এ অঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতিসহ জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তাঁরা। ওই ৩৭ জনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের ওই ৯ নেতা আছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে ‘জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মীদের’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের ‘নিরীহ-নির্দোষ’ নেতা–কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হচ্ছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের ওই ৯ নেতার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে সাতজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অনিমেষ রায়, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহিদ ব্যাপারী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরী, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ নাসির, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাহেব সরোয়ার ও জেলা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার পাল। এ ছাড়া ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খলিফা কামালউদ্দিনের নাম সংবাদ সম্মেলনে নেওয়া হলেও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অনিমেষ রায়। পরে উপস্থিত নেতারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বরকত–রুবেলের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযোগপত্রে আমাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলে আমরা যেমন ব্যক্তি, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব, তেমনি ফরিদপুরের আওয়ামী রাজনীতিতেও বিষয়টি বড় ক্ষতির কারণ হবে। কয়েক দিন পর জাতীয় নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি একটি ইতিবাচক জায়গায় এনেছেন। এ অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগপত্র সেই জায়গাটি প্রশ্নবিদ্ধ করবে, যা এ অঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতিসহ জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি।’

সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী সত্যজিৎ মুখার্জিসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি
ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত দিনে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের সময় তাঁর ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেনের হাত ধরে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জামায়াত–বিএনপিসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা ফরিদপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে। তাদের প্রধান এজেন্ট বরকত–রুবেল দুই ভাই কৌশলে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ত্যাগী নেতাদের ফরিদপুর থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার ভয়ংকর ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়ন করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়। বরকত–রুবেলসহ অনেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের নামে বিভিন্ন মামলা হয়। এর মধ্যে একটি ঢাকার কাফরুল থানার বহুল আলোচিত অর্থ পাচার মামলা।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বরকত–রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁদের অপকর্মের বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন, আদালতে প্রদত্ত ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগের ওই ত্যাগী নেতাদের নাম বলেন তাঁরা। পুলিশ তদন্ত করে উল্লিখিত নেতা–কর্মীদের দুর্নীতর ব্যাপারে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে তাঁদের নাম বাদ দিয়ে বরকত–রুবেলসহ ১০ জনের নামে অভিযোগপত্র দেয়। ওই অভিযোগপত্রে তাঁদের সম্পদের ও দুর্নীতির হিসাবে গরমিল থাকায় পুনর্তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত। পরে জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন বর্তমান, সাবেক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের জড়িয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে।

২০২০ সালের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় রুবেল–বরকতের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে আড়াই হাজার টাকা অর্জনের অভিযোগে মামলা করে সিআইডি। এ ঘটনায় ২০২১ সালে ৩ মার্চ রুবেল–বরকতসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার আরও ৩৭ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। মামলাটি ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। আগামী ৫ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হবে।