মাইক্রোবাস নিয়ে জনসমাগমস্থলে গিয়ে মুঠোফোন চুরি করাই তাঁদের ‘পেশা’

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনছবি: সংগৃহীত

দেশের কোথাও লোক সমাগমের খেলা, মেলা কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের খবর পেলেই মাইক্রোবাস ভাড়া করে ছুটে যান একদল মানুষ। এরপর ভিড়ের মধ্যে মিশে মানুষের মুঠোফোন চুরি করেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘হুমঘুঁটি’ খেলার আয়োজনস্থল থেকে মুঠোফোন চুরির অভিযোগে দুজনকে আটকের পর এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার এই চক্রের দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক দুজন হলেন চক্রটির সদস্য মো. রানা ওরফে চুন্নু (৪৮) ও মাইক্রোবাসের চালক মো. লিটন (৩৪)। রানা চট্টগ্রাম সদরের মরিচাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। লিটনের বাড়ি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের আনন্দপুর গ্রামে। তবে মো. রানা বর্তমানে উত্তরা আজমপুর এলাকায় ও লিটন টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় বসবাস করতেন।

পুলিশ জানায়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের দশমাইল বড়ইআটা এলাকায় গতকাল ঐতিহ্যবাহী হুমঘুঁটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় অসংখ্য মানুষের সমাগম হয়। খেলা চলাকালে অনেকের মুঠোফোন চুরির ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চুরি যাওয়া মুঠোফোন উদ্ধারে অভিযান চালায়। ওই সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দেওখোলা বাজার থেকে একটি কালো রঙের নোহা মাইক্রোবাস ও গাড়িতে থাকা দুজনকে আটক করা হয়। ওই সময় হুমঘুঁটি খেলা থেকে চুরি হওয়া ১৪টি মুঠোফোন উদ্ধার হয়। পুলিশ দুজনকে আটক করলেও চক্রটির অন্য চার থেকে পাঁচ সদস্য পালিয়ে যান।

আরও পড়ুন

দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সভা, সমাবেশ, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে সংঘবদ্ধভাবে মুঠোফোন চুরিই এই চক্রের সদস্যদের পেশা। এ ঘটনায় মাজহারুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে আজ ফুলবাড়িয়া থানায় মামলা করেছেন।

ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, হুমঘুঁটি খেলা থেকে মুঠোফোন চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার করা ১৪টি মুঠোফোন আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। চক্রটির অন্য সদস্যদের ধরতে চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, হুমঘুঁটি খেলাটি প্রাচীনকাল থেকে এ এলাকার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। প্রতিবছর পৌষের শেষ দিন তালুক-পরগনা সীমান্তে এ খেলার আয়োজন করা হয়। আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষেরা। এ খেলায় খেলোয়াড়েরও কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। ৪০ কেজি ওজনের এক পিতলের বলকে বলা হয় ঘুঁটি। আর এই ঘুঁটি টানাটানিই হলো খেলা। টেনেহিঁচড়ে কাড়াকাড়ি করে যে বা যাঁরা এই ঘুঁটি গুম করে ফেলতে পারবেন, তাঁরাই বিজয়ী।

আরও পড়ুন