মানিকগঞ্জে সপ্তাহের ব্যবধানে নাগালের বাইরে ফলের দাম

এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানিকগঞ্জে ফলের বাজারগুলোয় বিভিন্ন ফলের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। রোববার দুপুরে জেলার বাসস্ট্যান্ড ফলের বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্লভদী গ্রামের রিপন রায় ঢাকার সাভারে জুতা তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার তিনি বাড়িতে এসেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড বাজারে এসেছিলেন ফল কিনতে। তবে ফলের দাম শুনে আক্কেলগুড়ুম অবস্থা তাঁর।

রিপন রায় প্রথম আলোকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটিতে মাঝেমধ্যে বাড়ি এলেও কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয় না। পূজার ছুটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাবেন। এ জন্য কিছু ফল কিনতে বাজারে এসেছেন। কিন্তু বাজারে এসে দেখেন, ফলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গত শনিবার যে মাল্টা ২৬০ টাকায় কিনেছিলেন, আজ (রোববার) তাঁকে কিনতে হলো ৩০০ টাকা কেজি দরে।

স্থানীয় ফলবিক্রেতারা জানান, ডেঙ্গু ও ভাইরাসজনিত জ্বরে ফলের চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া দুর্গোৎসবেও ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। পূজায় প্রসাদের উপকরণ হিসেবে এবং অতিথি আপ্যায়নে ফলের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা ফলের সরবরাহ কমেছে। এসব কারণে ফলের দাম বেড়েছে।

ফলবিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফলের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গত সপ্তাহে ফলের যে দাম ছিল, সেই ফলের দাম কেজিতে ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ফলের দাম ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মানিকগঞ্জ শহরে ফলের বাজারগুলোয় প্রতি কেজি আপেল ৩৮০ টাকা, মাল্টা ৩০০ টাকা, ডালিম ৫৬০ টাকা, লাল আঙুর ৪৫০ টাকা, সাদা আঙুর ৫০০ টাকা, কমলা ৩৮০ টাকা, ড্রাগন ফল ৩২০ টাকা, নাশপাতি ৩৪০ টাকা, কলমি খেজুর ৮৫০ টাকা ও বরই খেজুর ৪০০ টাকা। অথচ গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আপেল ৩৫০ টাকা, মাল্টা ২৬০ টাকা, ডালিম ৫০০ টাকা, লাল আঙুর ৪০০ টাকা, সাদা আঙুর ৪৫০ টাকা, কমলা ৩৪০ টাকা, ড্রাগন ফল ৩০০ টাকা, নাশপাতি ৩০০ টাকা, কলমি খেজুর ৮০০ টাকা ও বরই খেজুর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানিকগঞ্জে ফলের বাজারগুলোয় বিভিন্ন ফলের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। রোববার দুপুরে জেলার বাসস্ট্যান্ড ফলের বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

দাম বাড়ায় অধিকাংশ ক্রেতাই ফল কিনতে পারছেন না। যাঁরা কিনছেন, তাঁরা পরিমাণে কম কিনছেন। নিম্ন আয়ের ক্রেতারা দেশীয় ফল ছাড়া অন্য ফল কিনতে পারছেন না।
ফলবিক্রেতা আবদুল আওয়ালের দোকানে মাল্টা ও আপেলের দাম শুনছিলেন স্কুলশিক্ষক আইয়ুব আলী। কিন্তু দাম শুনে আর কেনা হয়নি তাঁর। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য মাল্টা নিতে চেয়েছিলাম। তবে দাম শুনে আর নিইনি। কলা কিনলাম তিন হালি। সেটিও ৪০ টাকা হালি দরে!’

মানিকগঞ্জের ফলের খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগই পুরান ঢাকার বাদামতলী পাইকারি বাজার থেকে ফল কিনে আনেন। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড বাজার ফলপট্টি এলাকায় অন্তত ১০ জন ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ও মো. শাহজাহান বলেন, দেশে বর্তমানে আপেল, মাল্টা, কমলা, ডালিমসহ নানান ফল আমদানি করা হয়। দেশে ডলার-সংকট দেখা দেওয়ায় ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশি শুল্ক আরোপ করায় আমদানিতে খরচ বেড়েছে।

ফল বিক্রেতারা জানান, মাল্টা, কমলা, আপেলসহ অনেক ধরনের ফল ভারত থেকে আমদানি করা হয়।  কয়েক দিন ধরে ভারত থেকে এসব ফল আমদানি কমে গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই তাঁদের বেশি দামে ফল কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে ডেঙ্গু ও ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগী বাড়ায় এবং পূজায় ফলের চাহিদা বেড়েছে। দাম বাড়ায় তাঁদের কেনাবেচাও কমে গেছে।

ফলের দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সামছুন্নবী তুপিল প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো উৎসবে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। উৎপাদন ও আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনের নজরদারি বাড়ালে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

বাজার স্থিতিশীল ও খাদ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল। তিনি বলেন, অতি মুনাফার লোভে ভোক্তাদের কাছে অতিরিক্ত দামে ফল বিক্রি করা হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।