দুদকের মামলায় বগুড়ার সাবেক শ্রমিক লীগ নেতার চারটি বাড়ি জব্দ

সামছুদ্দিন শেখছবি: সংগৃহীত

বগুড়া জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ ওরফে হেলাল এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা চারটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় আদালতের নির্দেশে বাড়িগুলো গণপূর্ত অধিদপ্তরের জিম্মায় নেওয়া হয়।

বুধবার বিকেলে শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় সামছুদ্দিন ও তাঁর পরিবারের মালিকানায় থাকা চারটি বহুতল বাড়ি জব্দ করেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী এ এইচ এম শাহরিয়ার। এ সময় দুদক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকৌশলী এ এইচ এম শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশে সামছুদ্দিন শেখ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা চারটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এখন থেকে গণপূর্ত বিভাগ বাড়িগুলোর ভাড়া আদায় করে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করবে।

এর আগে গত বছরের ১২ নভেম্বর সামছুদ্দিন ও তাঁর পরিবারের মালিকানায় থাকা ৪টি বাড়ি ও ৯টি গাড়ি জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন বগুড়ার বিশেষ জজ আদালত। গাড়িগুলো বিআরটিসির কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এর মধ্যে দুই দিন আগে সামছুদ্দিন নিজেই তিনটি গাড়ি বিআরটিসির কাছে হস্তান্তর করেন। তবে বাকি ছয়টি গাড়ি তিনি হস্তান্তর করেননি।

সামছুদ্দিন শেখ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তিনি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র। ১৬ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে সামছুদ্দিন শেখ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেন। সামছুদ্দিন শেখ ছাড়া তাঁর প্রথম স্ত্রী মোছা. হেলেনা পারভীন ও ছেলে হোসাইন হাবীবের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা করা হয়।

দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ জারির পর সব আইনি প্রক্রিয়া মেনে সামছুদ্দিন শেখের চারটি বাড়ি আজ জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৯টি গাড়ির মধ্যে সামছুদ্দিন শেখ নিজেই তিনটি গাড়ি বিআরটিসির কাছে হস্তান্তর করেছেন। বাকি গাড়িগুলোর মালিকানা আদালতের নির্দেশের আগেই অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করেন বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম দুদক থেকে সামছুদ্দিন শেখ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণীর হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ২৫ মে তাঁরা দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এরপর অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক। তদন্তে দুদকে দাখিল করা বিবরণীর সঙ্গে সম্পদের গরমিল পাওয়া যায়।

এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের আদালতে হাজিরার তারিখ ছিল। কিন্তু আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করেছেন আদালত। এর পর থেকে সামছুদ্দিন ও মামলার অন্য আসামিরা পলাতক বলে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সামছুদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে গত ১৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তা এক মাসে আদালত থেকে ৫০০ গজ দূরের সদর থানায় পৌঁছায়নি বলে দাবি করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউল্লাহ। তিনি বলেন, আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামছুদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের দিকে সামছুদ্দিন শেখ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ একজন শ্রমিক ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীপন্থী শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁর কপাল খুলে যায়। বগুড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাড়া জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তিনি।

পরিবহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ, রেলওয়ের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণসহ নানা অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শহরে একাধিক বাড়ি, গাড়ি, দোকানের মালিক ছাড়াও শ্রমিকনেতা থেকে হয়ে যান পরিবহনমালিক। বগুড়া-ঢাকা রুটে ‘শাহ ফতেহ আলী পরিবহন’ নামে বাস কোম্পানির অন্যতম অংশীদার হয়ে ওঠেন তিনি। পরে দুদক তাঁর অবৈধভাবে সম্পদ অনুসন্ধানে নামে।