শাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিল ছাত্র ইউনিয়ন, প্যানেল ঘোষণা ছাত্রশিবিরের
নানা অভিযোগ এনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির শাবিপ্রবি শাখার সংগঠক নাজনীন লিজা। অন্যদিকে শাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দুর্বার সাস্টিয়ান ঐক্য’।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে লিখিত বক্তব্যে শাবিপ্রবি ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক নাজনীন লিজা জানান, শাকসু নির্বাচনকে ঘিরে চলমান প্রক্রিয়া আজ সম্পূর্ণভাবে অবিশ্বস্ত, অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের পর এর নিরপেক্ষতা নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছি। নির্বাচন কমিশন নিজেই প্রমাণ করেছে, তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম কাঠামো ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনের আগে ‘কথিত উইনিং পার্টি’ ও ক্ষমতা কাঠামোর লেজুড় স্বার্থন্বেষী কতিপয় শিক্ষার্থী ছাড়া কারও সঙ্গে প্রশাসন ও কমিশন আলোচনা করে না বলে উল্লেখ করেন নাজনীন লিজা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কার্যক্রমে শুরু থেকেই তারা (প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন) আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কিছু ব্যক্তি আমাদের অবমূল্যায়ন, বিদ্বেষ ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী কত ভোট পাবেন, সেই সংখ্যাও নির্ধারণ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ।’
ছাত্র ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নাজনীন লিজা বলেন, নানাভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা হচ্ছে। ক্যাটকলিং (বিভিন্নভাবে হয়রানি), মব উসকানি গত কয়েক দিন উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তারা কার্যত নীরব ও একপক্ষীয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন নাজনীন লিজা। তিনি বলেন, ‘আমরা বাউল নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাউলসন্ধ্যা করতে চাইলে প্রশাসন বিনা কারণে তা বাতিল করেছে। কিন্তু একই ধরনের অনুষ্ঠান প্রশাসনসমর্থিত একটি গোষ্ঠী করেছে। এটি কেবল সাংস্কৃতিক বঞ্চনা নয়, এটি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সংগঠিত প্রয়াস।’
প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, বৈষম্যমূলক ব্যবহার, রাজনৈতিক চাপ, ভয়, হুমকি ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এখানে কোনো অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই। নাজনীন লিজা বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে শাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। তবে আমরা গণতান্ত্রিক লড়াই থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না, বরং ভুয়া গণতন্ত্রের মুখোশ ছিন্ন করতেই আমাদের এ অবস্থান।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি সংসদের সংগঠক জুবায়ের জুয়েল ও প্রান্তিক দীপম।
ছাত্র ইউনিয়নের অভিযোগের বিষয়ে শাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবুল মুকিত মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ ও মুখপাত্র নজরুল ইসলামের মুঠোফোন কল দিলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সাজেদুল করিম বলেন, ‘এসব বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে যাচাই করে দেখব।’
‘দুর্বার সাস্টিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা শিবিরের
শাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেলের নামা দেওয়া হয়েছে ‘দুর্বার সাস্টিয়ান ঐক্য’। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদে দেলোয়ার হাসান (শিশির), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মুজাহিদুল ইসলাম ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মোহাম্মদ শাকিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আজ বেলা সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যায়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে শীর্ষ এই তিন পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার ও সেক্রেটারি মাসুদ রানা (তুহিন)।
শাকসুতে ২৩টি পদেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী রয়েছেন। এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন ক্রীড়া সম্পাদক পদে মাহবুব হাসান (অনু), সহক্রীড়া সম্পাদক পদে আহমদ বিন কেফায়েত, সাহিত্য ও বার্ষিকী সম্পাদক পদে তামিম রিজওয়ান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে জাবের বিন আবদুল খালেক, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ইবরাহিম বিন ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া ধর্ম ও সম্প্রীতি সম্পাদক পদে আসিফ ভূঁইয়া, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আজাদ শিকদার, ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে আমিনা বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আলী আব্বাস শাহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
একই প্যানেল থেকে শিক্ষা গবেষণা ও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে শামসুল শায়ান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুস সামাদ, আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক পদে সাজ্জাদুর রহমান, পরিবহনবিষয়ক সম্পাদক পদে মুহাম্মদ ইবরাহীম (সৌরভ), ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিন–বিষয়ক সম্পাদক পদে আসিফুর রহমান, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে বুরহান উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই প্যানেল থেকে পাঁচটি সদস্য পদে নির্বাচন করবেন সুমাইয়া নাভা, আদিবা সালেহা, শোয়াইব চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান ও জামিলুর রেজা (সৈকত)।
তফসিল অনুযায়ী, শাকসু নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা আজ প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।