আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ২ দিনেও মামলা হয়নি

নাটোরে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। পরে মাইক্রোবাস থেকে বিভিন্ন অস্ত্র ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়ফাইল ছবি

নাটোরে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি দুই দিন আগে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মাইক্রোবাস থেকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুল হাবীবের লিফলেট, প্রচারপত্রসহ নানা সরঞ্জাম ও অস্ত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু ওই ব্যাপারে এখনো কোনো মামলা হয়নি।

নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১৫ এপ্রিল বিকেলে প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘণ্টাখানেক পর মুমূর্ষু অবস্থায় দেলোয়ারকে গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায় তারা। গত শনিবার সন্ধ্যায় সিংড়ার শেরকোল ইউনিয়নের দুর্গম চকপুর গ্রামের আতাউর রহমানের বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আতাউর রহমানকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে গাড়ির মালিকানা (লুৎফুল হাবীবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অর্ক ট্রেডার্স) ও চালকের লাইসেন্স, ২টি চায়না চাপাতি, ১টি চায়না টিপচাকু, ১টি বার্মিজ কাটার, ২টি রামদা, ২টি স্টিলের পাইপ, ২টি স্ট্যাম্প ও দেশে তৈরি ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ওই গাড়ির ভেতর থেকে লুৎফুল হাবীবের নির্বাচনী প্রচারপত্র, পোস্টার, লিফলেট ও ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডারও উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া এসব অস্ত্র নাটোর সদর থানার মামলার আলামত হিসেবে তালিকা মূলে জব্দ করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলো সদর থানায় সংরক্ষিত আছে।

আরও পড়ুন

এদিকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় ব্যবহৃত আরও একটি ব্যক্তিগত গাড়ি জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে সিংড়ার নেঙ্গুইন এলাকা থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্ত লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের শ্যালক। তিনি উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে উপজেলার আওয়ামী লীগের নির্দেশে গতকাল তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

অপহরণের ঘটনায় ১৫ এপ্রিল রাতে দেলোয়ার হোসেনের ভাই মুজিবর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় মামলা করেন। পরের দিন গ্রেপ্তার হওয়া সুমন আহমেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি প্রতিপক্ষ প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন।

আইন অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক মামলা হওয়ার কথা পুলিশের। ঘটনাস্থল সিংড়া থানা এলাকায়, তাই মামলাও সেখানে হবে। নাটোর সদর ও সিংড়া থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো থানাতেই এ-সংক্রান্ত মামলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে দেশি অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেছি। এগুলো আমাদের থানার অপহরণ মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

অস্ত্র উদ্ধার করা হলে উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তা বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা করার বিধান রয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, কারও হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হলে তখন মামলা করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির দখল থেকে অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় মামলা করা হয়নি। শুধু জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটি আতাউর রহমান নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি (দখল) থেকে উদ্ধার হয়েছে। মাইক্রোবাসটির মালিক ও চালক শনাক্ত হওয়ায় অস্ত্রের মালিকানা তাঁদের ওপর বর্তাবে পারে কি না, সে বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা খোঁজা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী সদর থানার অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে সিংড়া থানায় এজাহার দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি এ ধরনের কোনো এজাহার পাননি। তাই নিজেরা বাদী হয়ে মামলা করেননি। এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।